Saturday, February 24, 2018

শিবের সাতটি রহস্য


শিবের সাতটি রহস্যঃ-

১) সাপঃ সর্প হচ্ছে সদা জাগ্রত থাকার প্রতীক। যদি আপনার গলায় একটি সাপ প্যাঁচানো থাকে, তাহলে আপনি কিছুতেই
ঘুমাতে পারবেন না।

২) ভষ্মঃ এটা জীবনের অনিত্যতাকে স্মরন করিয়ে দেয়। এটা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে আমাদেরও একদিন ভষ্মে পরিণত হতে হবে।

৩) চন্দ্রঃ চন্দ্র সর্বদাই মনের সাথে সম্পর্কিত। এটি জীবনের সকল পরিস্থিতিতে সুখী থাকা এবং মনের উপর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতার প্রতীক।

৪) ডমরুঃ এটা দেখতে ইনফিনিটি চিহ্নের মত। যা শিবের অসীম তথা উন্মুক্ত চিন্তাচেতনার প্রতীক।

৫) ত্রিশুলঃ শিব প্রকৃতির তিনগুন নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন, এটি তারই প্রতীক। তিনি এটির মাধ্যমে সকলকে নিজ নিজ ধর্ম
পালনে উৎসাহিত করে থাকেন।

৬) নীলাভ শরীরঃ আকাশ অন্তহীন, শিবও তেমনি অন্তহীন। নীলাভ শরীর অন্তহীন আকাশের মতই শিবের অন্তহীনতা
তথা অসীমতার প্রতীক।

৭) গঙ্গাঃ গঙ্গা নিষ্কলুষ জ্ঞানের প্রতিনিধিত্ব করে। যখন শিবের মতই আমাদের হৃদয় স্থির হয়, তখনই তাতে নিষ্কলুষ জ্ঞান প্রবাহিত হয়।

🕉️ হর হর মহাদেব 🕉

Thursday, February 22, 2018

শ্রীশ্রী লোকনাথ বাবার অষ্টোত্তর শতনাম

লোকনাথ নাম রাখিল গুরুভগবান।
১ প্রেমবতার(তুমি) ঠাকুর(তুমি) নারায়ণ।।
২ অগতির গতি (তুমি)তুমি লোকনাথ।
৩ সুরলোকে ছিলে তুমি হয়ে বিশ্বনাথ।।
৪ নাম দিল মা কমলা আমারযাদুমণি।
৫ ভক্তবাঞ্ছা নাম দিল যতেক্জ্ঞানী গুণী।।
৬ শ্রীগোপাল নাম দিল যতেক্প্রতিবাসী।
৭ মহাযোগী তুমি যে গো জানে ভারতবাসী।।
৮ দেবপ্রসাদ নাম রাখিল যতভক্তগণে।
৯ ব্রহ্মচারী রূপ দিল গুরুভগবানে।।
১০ একাদশে নাম পেলে বালকসন্ন্যাসী।
১১ ভ্রাতাগণ নাম দিলতুমি গৌরশশী।।
১২ বিপদবারণ হরি দিল ডেঙ্গুকর্মকারে।
১৩ বিশ্বগুরু হয়ে থাকবিশ্বচরাচরে।।
১৪ গোয়ালিনী মা দিল নামভক্তি-মুক্তিদাতা।
১৫ জীবরূপী শিব তুমি গুরুতুমি জগৎত্রাতা।।
১৬ পাপী তাপী নাম দিলতুমি ক্ষমাসার।
১৭ দয়াময় নামে ফের এ বিশ্বমাঝার।।
১৮ বাৎসল্য পারাপার নাম দিলসাধক বেণী।
১৯ ভবরোগের বৈদ্য তুমি,তোমারে প্রণমি।।
২০ ত্রিকালদর্শী নাম রাখিলবিজয় গোস্বামী।
২১ সিদ্ধযোগী নাম দিলত্রৈলঙ্গস্বামী।।
২২ গুরু গোঁসাই নাম দিল ভক্তভজলে রাম।
২৩ মঙ্গলকারী বাবা তুমি বারদী তীর্থধাম।।
২৪ অনাথ শরণ নামপেলে অনাথের কাছে।
২৫ গীতার ভগবান তুমি ভক্তবৃন্দনাচে।।
২৬ ভবের কান্ডারী তুমি ভবপারাপার।
২৭ সিদ্ধিদাতা গণেশতুমি করুণা অপার।।
২৮ নিত্যসিদ্ধ পুরুষ নামরামকৃষ্ণ দিল।
২৯ কলির কলুষহারী নামযে রহিল।।
৩০ ভুবন মঙ্গল নামে রও এইভুবনের মাঝে।
৩১ সচ্চিদানন্দবাবা তুমি ভক্তহৃদে বাজে।।
৩২ স্বজন পালক নাম তোমারগো ব্রহ্মচারী।
৩৩ দুর্জনেরকাছে তুমি চক্রধারী।।
৩৪ ব্যথাহারী ডাকে তোমায় যতব্যথিত জনে।
৩৫ অভয়দাতা নাম দিল যতঅভাজনে।।
৩৬ চিরসুন্দর তুমি প্রভু বিশ্বচরাচরে।
৩৭ জ্ঞানমূর্তি বাবা লোকনাথযে তোমা স্মরে।।
৩৮ সর্বহারারকাছে তুমি নির্ধনের ধন।
৩৯ সর্ব ঘটের ঘটি তুমি থাকসর্বক্ষণ।।
৪০ বেদের বর্ণিতশব্দে তুমি সেই কবি।
৪১ আলোকজ্যোতি রূপে সদা উদ্ভাসিতরবি।।
৪২ অচিন্তের চিন্তা তুমি জগতচিন্তাময়ী।
৪৩ প্রাণীর প্রাণ তুমি ভূলোকস্বামী।।
৪৪ ব্রহ্মের সন্তানমোরা তুমি ব্রহ্মময়।
৪৫ অধম তারণ আর এক নাম প্রভুতোমার হয়।।
৪৬ ভীতজনে ডাকে তোমারবরাভয় নামে।
৪৭ বিশ্বরূপে বিরাজ প্রভু এধরা ধামে।।
৪৮ শান্তিদাতা নাম দিলরোগি শোকিগণ।
৪৯ বিপত্তারণনামে ডাকে তোমা সর্বজন।।
৫০ অনঙ্গ চৈতন্য নাম তোমারযে প্রভু।

৫১ নিত্য নিরঞ্জন নাম ভুলিবনা কভু।।
৫২ জীবের প্রভু তুমি জীবেরজীবন।
৫৩ দ্রষ্টা তুমি দৃশ্যতুমি হেরি সর্বক্ষণ।।
৫৪ জগন্নাথ আর এক নামজানে ধরাবাসী।
৫৫ মহাদেব হয়ে থাক তীর্থবারাণসী।।
৫৬ জয় জয় গুরু তোমা ত্রিতাপহারী।
৫৭ বিরাজি সবা প্রভু গোলকবিহারী।।
৫৮ কেউবা তোমার নাম রাখিলবাবা তারকনাথ।
৫৯ শক্তিধর আরেক নাম তোমারলোকনাথ।।
৬০ ঋষি শ্রেষ্ঠ গুরু তোমার হলযে নাম।
৬১ বিশ্ব মানব তরে এলে মানবপরাণ।।
৬২ পরব্রহ্ম তুমি প্রভুকরুণা নিদান।
৬৩ সপ্ত ঋষিরঋষি তুমি করুণা মহান।।
৬৪ সর্ব দিকে আছ তুমি নামদিগম্বর।
৬৫ পাতঞ্জলেরকাছে তুমি হইলে ঈশ্বর।।
৬৬ কুল নারীরকাছে তুমি জাতি কুল মান।
৬৭ জ্ঞানী জীবেরকাছে হইলে তুমি যে মহান।।
৬৮ বিষ্ণুরূপে হেরে তোমায় যতবৈষ্ণবগণ।
৬৯ শান্তগণে শক্তিরূপে পূজে সর্বক্ষণ।।
৭০ হইল আর এক নাম গৌরাঙ্গসুন্দর।
৭১ বাসুদেব নামে ব্যক্ত বিশ্বচরাচর।।
৭২ আদি দেব তুমি প্রভু পুরুষপরাৎপরে।
৭৩ অচিন্তেরচিন্তামণি যিনি চিন্তা করে।।
৭৪ কেহ তোমার নাম দিলঅন্নদাতা প্রভু।
৭৫ শান্তিসাগর আর এক নামভুলিব না কভু।।
৭৬ চিরকাল আছ অলক বিহারী।
৭৭ চিরকাল রবে নামবাবা ব্রহ্মচারী।।
৭৮ মৃত্যুঞ্জয়নামে তুমি রহিবে ধরাতে।
৭৯ লুপ্ত আযের আচার ধর্মসবারে শিখাতে।।
৮০ গুরুর গুরু নামরাখে স্বামী শিবানন্দ।
৮১ মোহ তিমিরহর নাম দিলশ্রীমৎ ব্রহ্মানন্দ।।
৮২ রজনীকান্ত নাম দিলসাক্ষী দিবাকর।
৮৩ অভয়াচরণ দিল নামতুমি বিঘ্নহর।।
৮৪ মনোহর রূপ তোমার মনোহরণনাম।
৮৫ দয়ারাম প্রভুরূপে বহালে যে বান।।
৮৬ সুরথ নাথ নাম দিলতুমি স্পর্শমণি।
৮৭ মূর্তিমান গীতা নাম দিলযামিনী।।
৮৮ ব্যথিতেরব্যাথাহারী তুমি লোকনাথ।
৮৯ তুমি সৃষ্টি স্থিতি লয়তোমায় প্রণিপাত।।
৯০ সগুণ নির্গুণ নাম তোমারযে গো হয়।
৯১ প্রকাশিছে তবআলো তুমি জ্যোতির্ময়।।
৯২ ক্ষুধাতুরেরক্ষুধাহারী তুমি মূর্তিমান।
৯৩ দুঃখী জনের সুখ তুমি পরমসুখন নাম।।
৯৪ অলক্ষের আলেখ্যতুমি ওগো ব্রহ্মচারী।
৯৫ সর্বজনের কাছে প্রভুতুমি শান্তি বারি।।
৯৬ জানকী রাখিল নাম জাতিরজনক।
৯৭ বিঘ্নহর নাম রাখিল তোমারসেবক।।
৯৮ আজানুলম্বিত বাহু তুমি রামঅবতার।
৯৯ চন্দ্রমা তপন আঁখিযুগলযে যুগাবতার।।
১০০ সংসার বৃক্ষ নাম দিল যতেকসংসারী।
১০১ তুমি গুরু লোকনাথওগো ব্রহ্মচারী।।
১০২ মাতা নাম দিয়া গুরু কেহতোমা ভজে।
১০৩ শ্রীরাধিকা রূপে ছিলে সখী সনে ব্রজে।।
১০৪ কেউবা হেরে শ্যামরূপে কেউবা হেরে শ্যামা।
১০৫ তুমি প্রভু মনোরম তুমিইমনোরমা।।
১০৬ মৃন্ময়েতে চিন্ময় হয়ে থাকসর্বক্ষণ।
১০৭ সর্বভূতের আত্মা প্রভুতুমি পরম ধন।।
১০৮ অষ্টোত্তর শতনাম সমাপ্তহৈল।
জয় বাবা লোকনাথ সবে মিলি বল। এই নাম পাঠ কিংবা শুনে যেইজন। বাবার অসীমকৃপা লভে সেইজন। লোকনাথ বাবার শতনামমাহাত্ম্যঅষ্টোত্তর শতনামমহাপুণ্যময়। শ্রবণ পঠনে সর্বপাপ নাশহয়।।বাবার অসীমকৃপা লভে সেইজন। ভক্তিভরে এই নাম যে করে পঠন। অষ্টোত্তর শতনাম যেবা রাখে ঘরে। রোগ শোক গৃহ হতে যায় সবদূরে। ব্যঘ্রভয় সর্পভয় আর চৌযভয়। ভূত-প্রেতাদির সর্ববাধা দূর হয়। অপুত্রের পুত্র হয় ধনার্থীরধন। সদাবশে থাকে তার আত্মীয়স্বজন।।ধনৈশ্বরয বাড়ে তার বাবারকৃপাতে। সর্ববিঘ্ন দূর হয় তাহারগৃহেতে। জলে স্থলে রণে বনে যেখানেই থাক।জয় বাবা লোকনাথ বলে তাঁরে ডাক। অবশ্যই বাবা তারে করিবে রক্ষণ। ইহাতে সন্দেহ নাইজেনো সর্বজন। জয় জয় লোকনাথ জগতেরপতি। তব পদে অধমের থাকে যেনমতি।
জয় বাবা লোকনাথ, জয়মা লোকনাথ, জয় গুরুলোকনাথ, জয় শিব লোকনাথ,জয় ব্রহ্ম লোকনাথ।

মা লক্ষ্মীর কৃপালাভের কিছু মন্ত্র ও আচার-অনুষ্ঠান !

মা লক্ষ্মীর চারটি হাত। ধর্ম, কর্ম, অর্থ ও মোক্ষ— হিন্দুশাস্ত্রে এই চার হাতের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করাহয়েছে এভাবেই। যাঁরা মনে করেন মা লক্ষ্মী শুধুমাত্র ধনের দেবী, তাঁরা সম্ভবত দেবীর এই ব্যাখ্যা সম্পর্কেঅবহিত নন।
সমুদ্রমন্থন থেকে উদ্ভব মা লক্ষ্মীর। কিন্তু সবার আগে জানা প্রয়োজন তিনি কে? কীভাবে আবির্ভূতহলেন তিনি। এই নিয়ে নানা মত রয়েছে। কখনও বলা হয় তিনি ছিলেন ঋষি ভৃগুর সন্তান এবং সমুদ্রমন্থনে তাঁর পুনর্জন্ম হয়। আবার অন্য একটি মত অনুযায়ী, তিনি সমুদ্রদেব বরুণের কন্যা।
মা লক্ষ্মীরও আগে আবির্ভূত হয়েছিলেন দেবী সরস্বতী। একটি পৌরাণিক গল্পে বলা হয়েছে, ব্রহ্মার সাত সন্তান, সপ্তঋষির মধ্যে ৬জনই দেবী সরস্বতীর আরাধনা করে দৈবজ্ঞান লাভ করেন। কিন্তু প্রশ্ন তোলেন মহর্ষি ভৃগু। মানবশরীরের ক্ষুধা নিবারণ কীভাবে ঘটে, সেই খোঁজে তিনি বেরিয়ে পড়েন। শেষ পর্যন্ত উত্তরটি পান সমু্দ্রদেববরুণের কাছে।
মহর্ষি ভৃগু তার পরেই উপলব্ধি করেন যে মগজের বা মননের পুষ্টিলাভ যেমন হয় দেবী সরস্বতীর আরাধনায় তেমনই নশ্বর শরীরের পুষ্টির জন্য মা লক্ষ্মীর আবাহন ও পূজা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই মা লক্ষ্মীকে শুধুমাত্র ধনদেবী হিসেবে দেখলে তাঁর মহিমার সম্পূর্ণটা দেখা হয় না।
তাঁর আশীর্বাদ মানুষের ক্ষুধা নিবারণের জন্য, গৃহস্থের সার্বিক কল্যাণের জন্য। আর এই দুয়ের জন্যই প্রয়োজন অর্থের। কিন্তু সেই অর্থ পাওয়ার পরে মানুষ তার প্রয়োগ কীভাবে করছে, সেদিকে তাঁর কড়া নজর। অপচয় বা অন্যায় প্রয়োগ তিনি সইতে পারেন না, তাই তিনি চঞ্চলা।

 যে মানুষ ধর্মের পথে থাকে, সৎকর্মের মাধ্যমে ধন উপার্জনে করতে যে তৎপর, তাঁকেই কৃপা করেন মা লক্ষ্মী। মোট ১৬ প্রকার সম্পদ প্রদান করেন তিনি— খ্যাতি, জ্ঞান, সাহস ও শক্তি, জয়, সুসন্তান, বীরত্ব, স্বর্ণ, অন্যান্য রত্নরাজি, শস্য, সুখ, বুদ্ধি, সৌন্দর্য, উচ্চাশা, উচ্চভাবনা, নৈতিকতা, সুস্বাস্থ্য এবং দীর্ঘ জীবন।
আবার মা লক্ষ্মীর কৃপালাভের পরেও যে ধর্ম ও সৎকর্মের পথ থেকে বিচ্যুত হয় না, ব্যক্তিগত স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে উপার্জিত অর্থ মানুষের উপকারে ব্যয় করে, তারই প্রকৃত মোক্ষলাভ ঘটে।
অর্থাৎ একটি সুস্থ, সুন্দর, সৎ জীবনদর্শনের কথা উঠে আসে মা লক্ষ্মীর মহিমা বর্ণঁনায়। তাই দেবী অপরিচ্ছন্ন জায়গায় কখনও থাকেননা, নিয়মানুবর্তিতা, সুব্যবহার এবং পরিমিত জীবনযাপন পছন্দ করেন। বাংলায় লক্ষ্মীপুজোর সংস্কৃতি ভারতের অন্যান্য রাজ্যের থেকে একটু অন্যরকম।
যেমন ভারতের বেশিরভাগ অঞ্চলে শুক্রবার মহালক্ষ্মীর উপবাস রাখা হয় ও বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়। ওদিকে বাংলার ঘরে ঘরে বৃহস্পতিবারই লক্ষ্মীবার। কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো দক্ষিণ ভারত ও পূর্ব ভারতে অত্যন্ত জনপ্রিয় হলেও উত্তর ও পশ্চিম-ভারতে মা লক্ষ্মীর আবাহন মূলত হয় ধনতেরাস-দিওয়ালি তিথিকে কেন্দ্র করে।
কিন্তু বছরে মাত্র একটি বা দু’টি দিন নয়, শাস্ত্রজ্ঞরা বলেন যে ধারাবাহিকভাবে, যদি সারা বছরই কিছু আচার-অনুষ্ঠান পালন করা যায় এবং ভক্তিভরে কিছু নির্দিষ্ট মন্ত্রোচ্চারণ করা যায়, তবে তাঁর কৃপালাভের পথ সুগম হয়।
ভক্তরা নানাভাবে দেবদেবীর আরাধনা করেন। হিন্দুধর্ম ও হিন্দু আচারের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এর বৈচিত্র যা অঞ্চলবিশেষে যেমন আলাদা, তেমনই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমাগত মেটামরফোজড হয়ে চলেছে।
শ্রীরামকৃষ্ণ যেমন বলেন, যত মত তত পথ, তেমনই আচার-অনুষ্ঠানের কোনও শেষ নেই এবং সেই সব পথই ধাবিত হয় ঈশ্বরের দিকে। মনে যদি ভক্তি থাকে, তবে যে পথেই আরাধনা করা হোক না কেন, ঈশ্বরের কাছে সেই প্রার্থনা অবশ্যই পৌঁছয়। নীচে উল্লিখিত আচারগুলি ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে প্রচলিত।
১. ঠাকুরঘরে বা ঠাকুরের সিংহাসনে কড়ি এবং শঙ্খ রাখা খুবই শুভ গৃহের কল্যাণের জন্য। 
২. দক্ষিণাবর্ত শঙ্খকে বলা হয় মা লক্ষ্মীর শঙ্খ। লাল, সাদা বা হলুদ রংয়ের একটি পরিষ্কার কাপড়, একটি রুপোর পাত্র অথবা মাটির পাত্রের উপর রাখতে হয় এই শঙ্খ। এই শঙ্খের মধ্য দিয়েই মা লক্ষ্মীর আশীর্বাদ প্রবাহিত হয় বাসস্থানে। 
৩. প্রতিদিন মা লক্ষ্মীর প্রতিমা বা পটের সামনে দু’টি ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালালে তা মঙ্গল। এর সঙ্গে পদ্ম, নারকেল ও ক্ষীরের নৈবেদ্য দিলে প্রসন্ন হন দেবী।
 ৪. একটি বাঁশের বাঁশিকে সিল্কের কাপড়ে মুড়ে ঠাকুরের সিংহাসনে রাখলে মা লক্ষ্মী প্রসন্ন হন কারণ বাঁশিহল বিষ্ণুর অবতার শ্রীকৃষ্ণের প্রিয়। তাই মা লক্ষ্মীরও অতি প্রিয়।
 ৫. শুধুমাত্র পুজোর দিনে নয়, প্রতিদিনই যদি দেবীর পায়ের চিহ্ন আঁকা ভাল। প্রতিদিন না পারলে বৃহস্পতিবার অথবা শুক্রবার এবং মা লক্ষ্মীর পুজোর তিথি থাকলে তো অবশ্যই। 
৬. যিনি প্রতি শুক্রবার পরমান্ন বা মিষ্ট অন্ন দিয়ে গোসেবা করেন তাঁর প্রতি বিশেষ প্রসন্ন হন দেবী।
৭. বলা হয় সমস্ত দেবতা বাস করেন তুলসি বৃক্ষে আবার অন্য একটি মত অনুযায়ী দেবী তুলসি হলেন মা লক্ষ্মীরই এক রূপ। তাই বাড়িতে তুলসি বৃক্ষ থাকলে এবং সেখানে প্রতিদিন সেখানে প্রদীপ জ্বাললে তুষ্ট হন মা লক্ষ্মী।
 ৮. প্রতি শুক্রবার পদ্মমূল থেকে তৈরি নয়টি সলতে দিয়ে একটি মাটির প্রদীপ মা লক্ষ্মীর পট বা প্রতিমার সামনে জ্বাললে তা গৃহে প্রাচুর্যের সমাহার ঘটায়।
 ৯. ধারাবাহিকভাবে ১২ দিন ধরে সম্পূর্ণ ভক্তিভরে লক্ষ্মী দ্বাদশ স্তোত্র ১২ বার উচ্চারণ করলে ঋণমুক্তি ঘটে।
 ১০. প্রতিদিন স্নান করে শুদ্ধ হয়ে লক্ষ্মী গায়ত্রী মন্ত্র ১০৮ বার জপ করলে অত্যন্ত সন্তুষ্ট হন মা লক্ষ্মী। এই মন্ত্র জপ করার সময় পদ্মবীজের মালা ব্যবহার করলে ভাল। 
১১. এছাড়া টানা ৩০ দিন ধরে মা লক্ষ্মীর প্রতিমা বা পটের সামনে নিষ্ঠাভরে শ্রী সুক্ত পাঠ করলে বিশেষ প্রসন্ন হন দেবী। শ্রী সুক্ত হল ১৫টি ভার্সের একটি সম্মেলন।

 লক্ষ্মীপূজায় নিষিদ্ধ বিষয় : লক্ষ্মীপূজায় লোহা বা স্টিলের বাসনকোসন ব্যবহার করবেন না। লোহা দিয়ে অলক্ষ্মী পূজা হয়। তাই লোহা দেখলে লক্ষ্মী ত্যাগ করে যান।লক্ষ্মীপূজায় ঘণ্টা বাজাতে নেই। লক্ষ্মীকে তুলসীপাতা দিতে নেই। কিন্তু লক্ষ্মীপূজার পর একটি ফুল ও দুটি তুলসীপাতা দিয়ে নারায়ণকে পূজা করতে হয়। লক্ষ্মীপূজা সাধারণত সন্ধ্যাবেলা করে, তবে অনেকে সকালেও করে থাকেন। সকালে করলে সকাল ন-টার মধ্যেকরে নেওয়াই ভাল। পূজার পর ব্রতকথা পাঠ করতে হয়।

কিছু বিষয় : লক্ষ্মীপূজা প্রতিমা, সরা বা লক্ষ্মীর ঝাঁপিতে হয়ে থাকে। পূর্ববঙ্গীয়রা সাধারণত সরা বা প্রতিমায় লক্ষ্মীপূজা করেন, পশ্চিমবঙ্গীরা লক্ষ্মীর ধানপাত্রে বা ঘটে পূজা করেন। কারো কারো বিশেষ পারিবারিক লক্ষ্মীপ্রতীক রয়েছে। যাঁর যা আছে, বা যাঁদের যা নিয়ম তাঁরা তাতেই লক্ষ্মীপূজা করবেন। পূজার পূর্বে পূজাস্থান পরিষ্কার করে নিয়ে ধূপ দীপ জ্বালিয়ে দেবেন। পূজাস্থানে লক্ষ্মীর পা-সহ আলপনা আঁকবেন। ঘটের পাশে একটি লক্ষ্মীর পা অবশ্যই আঁকবেন।
পূজার সময়অন্যমনস্ক হবেন না বা অন্য লোকের সঙ্গে কথা বলবেন না। মনকে লক্ষ্মীতে স্থির রাখবেন। পূজার সময় অন্য কথা বললে বা অন্যমনস্ক হলে মন্ত্রপাঠাদি করে লক্ষ্মীপূজা করাই শ্রেয়। কিন্তু একমনে আন্তরিকভাবে লক্ষ্মীপূজা করলে বিনা মন্ত্রেই পূজা সিদ্ধ হয়। অবশ্য দীক্ষিত হলে গুরুমন্ত্রেও পূজা চলে। বিশেষভাবে মনে রাখবেন, মন্ত্রপাঠ ও পূজাক্রিয়াদিতেঅভিজ্ঞ ব্যক্তিরা বিনা মন্ত্রে পূজা করবেন না। বিনা মন্ত্রে পূজা শুধু সেই সবে অনভিজ্ঞদের জন্য।
লক্ষ্মীপূজা বৃহস্পতিবার মাত্রেই করা যায়। তার জন্য তিথি নক্ষত্রের বিচার করতে হয় না। তাই যাঁরা প্রবাসী তাদের ভারতীয় বা বাংলাদেশী সময় মিলিয়ে পূজা না করলেও চলবে, যেদেশে যেমন বৃহস্পতিবার পড়বে, সেই দেশে তেমনই করবে।
তাছাড়া শাস্ত্রে আছে, প্রবাসে নিয়মং নাস্তি। তাই প্রবাসী হলে রবিবার বা সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও লক্ষ্মীপূজা করতে পারেন। সেক্ষেত্রে পূজার আগে মায়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে বলে নেবেন, মা বৃহস্পতিবার পূজা করতে পারলাম না, আজ পূজা নাও। ভারত বা বাংলাদেশবাসী হলে বৃহস্পতিবারের পূজা বৃহস্পতিবারেই করবেন।

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বিশ্বরূপ দর্শন




                            স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বললেন যে, এই জড় জগত তার সৃষ্টি এবং তিনি প্রকাশ রূপে প্রবিষ্ট হয়েছেন বলেই এই জগত সৃষ্টি সম্ভব হয়েছে। এইকথা শুনে অর্জুনের মনে সংশয় দেখা দেয়। তিনি জগত থকে সর্ম্পূন আলাদা হওয়া সত্ত্বে ও শ্রীকৃষ্ণ কিভাবে জগতের অভ্যন্তরে সমস্থ কর্ম পরিচালনা করছেন তা দেখতে চাইলেন। অর্জুনের হৃদয়ের সুপ্তবাসনা জানতে পেরে শ্রীকৃষ্ণ তার বিশ্বরূপ দর্শন করাবেন বলে ঠিক করলেন। কিন্তু তিনি জানতেন অর্জুন তার দ্বিভুজ শ্যামসুন্দর রূপ দেখেই পুর্নমাত্রায় তৃপ্ত। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বিশ্বরূপ দর্শন করা বা তাকে শোনা এই জড় ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে সম্ভব নয়। তার বিশ্বরূপ দর্শন করতে গেলে দিব্য দৃষ্টির প্রয়োজন হয়। আর এই দিব্য দৃষ্টি লাভকরা সম্ভব প্রেম ভক্তি সহকারে ভগবানের সেবায় নিজেকে নিয়জিত করে। এক জায়গায় বসে ব্রহ্মান্ড দর্শন করা এবং শ্রীকৃষ্ণের বিশ্বরূপের দিব্য তেজ সহ্য করা সাধারন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়, তাই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে একটি বিশেষ শক্তি ও চক্ষু প্রদান করলেন, যাতে অর্জুন শ্রীকৃষ্ণের বিশ্বরূপের তেজ সহ্য করতে পারেন।অর্জুন যখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বিশ্বরূপ দর্শন করেছিলেন তখন তিনি শ্রীকৃষ্ণের পায়ের কাছে হাত জোর করে বসেছিলেন। অর্জুন দেখতে পেলেন শ্রীকৃষ্ণের শরীরে হাজার হাজার আলোক রশ্মি, অসংখ্য গ্রহ-নক্ষত্র সমন্বিত অনন্ত ব্রহ্মান্ড, সীমাহীন হস্ত, পদ, মুখ, কোনটি হিংস্র, কোনটি শান্ত, কোনটির থেকে বৈরাগ্য প্রকাশ
পাচ্ছে, আবার কোনটি মুক্তির পথ দেখাছে।

জয় শ্রীকৃষ্ণ

Wednesday, February 21, 2018

হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী পুনর্জন্ম সম্পর্কে ১০টি তথ্য

সনাতন ধর্ম - Sanatan Dharma : প্রাচীনকালের অনেক সভ্যতাতেই জন্মান্তর স্বীকৃত ছিল। সাম্প্রতিক কালে হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন এবং শিখ ধর্ম ছাড়া বিশেষ কেউ পুনর্জন্মকে স্বীকার করে না।

হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, আত্মা অবিনশ্বর। কারণ তা পরমাত্মার অংশ। মৃত্যুর পরে তা পরম সত্তায় বিলীন হয়ে যায়। কিন্তু প্রতিটি জন্মেই তা হয় না। কার্যত কর্মফল মানুষকে এক জন্ম থেকে অন্য জন্মের দিকে নিয়ে যায়।
এই তত্ত্বকে অনেকেই ভুল ব্যাখ্যা করেন। এক জন্ম থেকে অন্য জন্মে আত্মার গমন এক জটিল বিষয়। তাকে বৌদ্ধ ধর্ম যেভাবে ব্যাখ্যা করে, তা এক বিরাট যুক্তি পরম্পরা। জন্মান্তর সম্পর্কে কিছু তথ্য এখানে সন্নবিষ্ট রইল, যা হয়তো অনেক ভ্রান্তিরই নিরসন ঘটাতে পারে।
১. সাধারণত, মানুষ বেশিরভাগ সময়েই মানব জন্মের দিকেই ধাবিত হয়। তবে তার অন্য জীব হিসেবে জন্মও ঘটে।
২. কোনও পুরুষ পর পর তিনবার পুরুষ হিসেবে এবং কোনও নারী পর পর তিনবার নারী হিসেবে জন্ম নেন।
৩. কর্মফলবাদ অনুসারে সুকর্মগুলি দুষ্কর্মকে অতিক্রম করে না। দুষ্কর্মের জন্য দুর্ভোগ প্রত্যেককেই পোহাতে হয়। সুকর্ম থেকে জাত সুখও ভোগ করতে হয়।
৪. কারও যদি কোনও ইচ্ছা অপূর্ণ থেকে যায়, মৃত্যুর পরে সে প্রেতযোনি প্রাপ্ত হয়। এবং পরবর্তী জন্মের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘দেবযান’ এই ‘অপেক্ষা’রই কাহিনি।
৫. ‘শ্রীমদ্ভাগবত গীতা’-র ‘বাসাংশী জীর্ণানী’ পড়ে কারও যদি মনে হয়, মৃত্যুর অব্যবহিত পরেই আত্মা অন্য শরীরে প্রবেশ করে, তবে তিনি ভুল করবেন। হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, আত্মাকে দুই জন্মের মধ্যবর্তী পর্বে সাতটি স্তর অতিক্রম করতে হয়। তার পরে কর্মফল অনুযায়ী তার পুনর্জন্ম হয়।
৬. জন্ম থেকে জন্মান্তরে পরিভ্রমণ করতে করতে আত্মা অভিজ্ঞতা লাভ করতে থাকে। প্রাথমিক জাতকগুলিতে সে পার্থিব সুখগুলিকে গুরুত্ব দেয়। পরবর্তী জন্মগুলিতে তার মধ্যে আধ্যাত্মচেতনার উন্মেষ ঘটে।
৭. আমাদের সৎ ও অসৎ কর্মগুলি আমাদের শরীরেই নিহিত থাকে। মৃত্যুর পরে তা আত্মার সঙ্গে সঙ্গে সেই সব কর্মের স্মৃতি যুক্ত হয়। এই স্মৃতিগুলির সঞ্চয়ই আত্মাকে জ্ঞানী করে তোলে এবং মুক্তির দিকে নিয়ে যায়।
৮. অনেকেই মনে করেন সৃষ্টির আদিলগ্ন থেকেই মহাজগতের যাবতীয় স্মৃতি আমাদের দেহে সঞ্চিত রয়েছে। একে উপলব্ধি করতে পারাটাই ‘আত্মোপলব্ধি’। এই উপলব্ধিই নির্বাণ বা মোক্ষের দিকে নিয়ে যায়।
৯. কেবলমাত্র মানুষেরই মোক্ষলাভ সম্ভব। মানবজন্মে পৌঁছতে গেলে আত্মাকে ৮৪ লক্ষ যোনি পরিভ্রমণ করতে হয়। মানবজন্মই শ্রেষ্ঠ। এখান থেকেই আত্মার পূর্ণ মুক্তি সম্ভব।
১০. ন্যায়শাস্ত্রে জন্মান্তর সিদ্ধ। প্রমাণ হিয়েবে ন্যায় জানায়, জন্মের অব্যবহিত পরেই মানুষ স্তন্যপান করতে চায়। তার জানার কথাও নয় সেটি কী বস্তু। পূর্বজন্মের স্মৃতিই তাকে সে দিকে চালিত করে।

Featured post

মন্ত্র- কি ?

"মননাৎ ত্রায়তে যস্মাৎ তস্মাৎ মন্ত্র উদাহৃতঃ।" যাহার মননের দ্বারা, চিন্তার দ্বারা, ধ্যানের দ্বারা সংসার-সাগর হইতে উর্ত্তীর্ণ হওয়া য...

Popular