আজ শুভ দোল পূর্ণিমা এবং ভগবান শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর আবির্ভাব তিথি ও গৌর পূর্ণিমা।
আসুন সকলে জেনে নিই দোল পূর্ণিমা বা হোলি কি ?
হিন্দু ধর্ম অনুসারে চারটি যুগ-সত্যযুগ, ত্রেতাযুগ, দ্বাপরযুগ এবং কলিযুগ।
বর্তমানে চলছে কলিযুগ। এর আগের দ্বাপরযুগ থেকে শ্রীকৃষ্ণের দোলযাত্রা বা
দোল উৎসব চলে আসছে। বলা হয় ১৪৮৬ সালের এই পূর্ণিমা তিথিতেই শ্রীচৈতন্য
মহাপ্রভু আবির্ভাব হয় বলে একে গৌর-পূর্ণিমা নামেও অভিহিত। তবে এর মূল
তাৎপর্য হলো রাধা-কৃষ্ণের সম্পর্কের উপাখ্যানে। ফাল্গুনী পূর্ণিমা তিথির এ
দিনে বৃন্দাবনের নন্দন কাননে শ্রীকৃষ্ণ আবির ও গুলাল নিয়ে তার সখী রাধা ও
তেত্রিশ হাজার গোপীর সঙ্গে রঙ ছোড়াছুড়ির খেলায় মেতে ছিলেন। এর স্মরণে এ
দিন সকালে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও রাধার বিগ্রহ আবির ও গুলালে স্নান করিয়ে
দোলায় চড়িয়ে কীর্তন গান সহকারে শোভাযাত্রা বের করা হয়। এরপর
কৃষ্ণভক্তরা আবির ও গুলাল নিয়ে পরস্পর রঙ খেলেন। এ সব দিক থেকে দোল উৎসবকে
দুইভাবে দেখা যায়- এবার আসি গৌর পুর্নিমার কথায়। হিন্দুধর্মের পৌরাণিক
উপাখ্যান ও শ্রীচৈতন্যের আবির্ভাব।। শ্রী গৌর সুন্দর হলেন কলি যুগের
সাক্ষাৎ কৃষ্ণ অবতার।কলির অধঃপতিত জীবদের করুনা করতে তিনি আবির্ভূত হলেন
শ্রীধাম নবদ্বীপে।
কিন্তু সবাইকে অবাক করে তিনি বেছে নিলেন ইংরেজি 1486
সালের ফাল্গুন মাসের এই পুর্নিমা তিথি তথা দোল পুর্নিমার এই পুন্য
তিথিকে।যেন আনন্দ উৎসবে এক নতুন মাত্রা যোগ করলেন।আর সবচেয়ে অবাক করা
বিষয়টি হচ্ছে ঐদিন সন্ধ্যায় মহাপ্রভুর আবির্ভাবের সময় হঠাৎ করে চন্দ্র
গ্রহণ শুরু হয়ে যায়।অর্থাৎ পুর্নিমার মাঝে চন্দ্র গ্রহণ।যাকে বলা হয়
eclipse of full moon যা জোতির্বিজ্ঞানের ইতিহাসে অত্যন্ত বিরল একটি
সন্ধিক্ষণ।শত বছরে এক দুইবার খুবই অল্প সময়ের জন্য এই সন্ধিক্ষণগুলো
আসে।তাই মহাপ্রভুর জন্মের এই সময়কে বলা হয় Auspicious সময়।এই রহস্যময় সময়েই
দিক বিদিক আলো করে উলুধ্বনি আর শঙ্খনাদের গর্জনে শচীমাতা আর জগন্নাথ
মিশ্রের ঘরে আবির্ভূত হলেন শ্রীম্মন মহাপ্রভু (মহাপ্রভুর জয় হোক) দোলের
আগের দিন খড়, কাঠ, বাঁশ ইত্যাদি জ্বালিয়ে উৎসবের অঙ্গ হিসেবে কেউ কেউ
তাতেও মেতে ওঠেন৷ যা হোলিকাদহন বা নেড়াপোড়া নামে পরিচিত। সাধারণ উত্তর
ভারতে হোলি উৎসবটি বাংলার দোলযাত্রার পরদিন পালিত হয়। তবে কোনও কোনও বছর
হোলি এবং দোল একই দিনে পড়তেও দেখা গিয়েছে৷
এদিকে স্কন্দপুরাণ
অনুসারে ফাল্গুনমাহাত্ম্য গ্রন্থাংশে হোলিকা ও প্রহ্লাদের উপাখ্যান কথা
শোনা যায়। হোলিকা ছিলেন মহর্ষি কশ্যপ ও তাঁর পত্নী দিতির পুত্র
হিরণ্যকশিপুর ভগিনী। ব্রহ্মার বরে হিরণ্যকশিপু দেব ও মানব বিজয়ী হয়ে
দেবতাদের অবজ্ঞা করতে শুরু করেন। এদিকে তাঁরই পুত্র প্রহ্লাদ ছিলেন বিষ্ণুর
ভক্ত। প্রহ্লাদ বিষ্ণুকে নিজের পিতার উপরে স্থান দেওয়ায় ক্রুদ্ধ হয়ে
হিরণ্যকশিপু তাঁর নিজের পুত্রকে পুড়িয়ে মারার আদেশ দেন। দাদার আজ্ঞায়
হোলিকা প্রহ্লাদকে কোলে নিয়ে আগুণে প্রবেশ করেছিলেন কারণ তার বর ছিল আগুণে
প্রবেশ করলেও তিনি অক্ষত থাকবেন। কিন্তু সেই বরের ক্ষেত্রে শর্ত ছিল
হোলিকাকে একা আগুণে প্রবেশ করতে হবে৷ সেই শর্ত ভুলে সে যখন প্রহ্লাদকে কোলে
নিয়ে আগুণে ঝাঁপ দিলে বিষ্ণুর কৃপায় প্রহ্লাদ অক্ষত থাকলেও আগুনে পুড়ে
হোলিকারই মৃত্যু হয়। সেই হোলিকার এই অগ্নিদগ্ধ হওয়ার কাহিনিকে ভিত্তি করে
দোলের আগের দিনে হোলিকাদহন বা চাঁচর উৎসবের আয়োজন করা হয়। যা আবাক
দুষ্টের দমন শিষ্টের পালনের প্রতীক স্বরূপ হিসেবে দেখা হয়৷ এদিকে আবার
রাধা-কৃষ্ণকে ঘিরে অন্য এক কাহিনিও প্রচলিত-শ্রীকৃষ্ণ এক দিন বৃন্দাবনে
রাধা এবং তার সখীদের সঙ্গে খেলা করছিলেন। সে সময় হঠাৎ রাধা এক বিব্রতকর
অবস্থার মুখোমুখি হয়ে লজ্জিত হন। শ্রীকৃষ্ণ রাধার লজ্জা ঢাকতে এবং বিষয়টি
তার সখীদের আবির খেলা শুরু করেন। তাদের সবাইকে আবির দিয়ে রাঙিয়ে দেন। এ
আবির খেলার স্মরণে হোলি উৎসব পালন করা হয়ে থাকে বলে প্রচলিত আছে। এ ছাড়া
বলা হয়ে থাকে, কৃষ্ণ নিজের কৃষ্ণ রঙ ঢাকতে বিভিন্ন ধরনের রঙ মাখিয়ে রাধার
সামনে হাজির হন। সেই থেকে এ উৎসবের শুরু।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Featured post
মন্ত্র- কি ?
"মননাৎ ত্রায়তে যস্মাৎ তস্মাৎ মন্ত্র উদাহৃতঃ।" যাহার মননের দ্বারা, চিন্তার দ্বারা, ধ্যানের দ্বারা সংসার-সাগর হইতে উর্ত্তীর্ণ হওয়া য...

Popular
-
"মননাৎ ত্রায়তে যস্মাৎ তস্মাৎ মন্ত্র উদাহৃতঃ।" যাহার মননের দ্বারা, চিন্তার দ্বারা, ধ্যানের দ্বারা সংসার-সাগর হইতে উর্ত্তীর্ণ হওয়া য...
-
লোকনাথ নাম রাখিল গুরুভগবান। ১ প্রেমবতার(তুমি) ঠাকুর(তুমি) নারায়ণ।। ২ অগতির গতি (তুমি)তুমি লোকনাথ। ৩ সুরলোকে ছিলে তুমি হয়ে বিশ্বনাথ।। ৪ ন...
-
আজ শুভ দোল পূর্ণিমা এবং ভগবান শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর আবির্ভাব তিথি ও গৌর পূর্ণিমা। আসুন সকলে জেনে নিই দোল পূর্ণিমা বা হোলি কি ? হিন্দু ধর্ম ...
No comments:
Post a Comment