পিতৃপক্ষের বিশেষ তাৎপর্য আছে তবে সেই তাৎপর্য দূর্গাপূজার সাথে সংশ্লিষ্ট নয়।মহালয়া খুবই গুরুত্বপূর্ন একটি তিথি।পিতৃপুরুষের আত্মার শান্তির জন্য শ্রাদ্ধদিও দান করা বিশেষ সামাজিক ও ধর্মীয় গুরুত্ব বহন করে।
এই পক্ষে পিতৃপুরুষের আত্মা মুক্তি পায় নি তাদেরকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেয়া হয়।আত্মা এই সমাবেশকে মহালয়া বলা হয়।”মহালয় থেকে মহালয়া শব্দটির উৎপত্তি।
কিংবদন্তী অনুসারে জীবিত ব্যক্তির আগের কয়েক পুরুষ পিতৃলোকে বাস করেন।ভগবান শ্রী কৃষ্ণ দ্বাপর যুগে গীতায় পিতৃলোকের কখা উল্লেখ করেছেন।
পিতৃলোকে থাকা আত্মাসহ সব আত্মার উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধাঞ্জলি ও তর্পনাধি করা হয়।
সনাতন ধর্মালম্ভীরা জন্মান্তরবাদে বিশ্বাসী।আত্মার মুক্তিলাভ,সদগতি লাভের জন্য সন্তান ও সন্তান বাৎসল্যরা শাস্ত্রীয় মতে,ক্রীয়া কর্মাদি করে থাকেন।
মহালয়ার একটির তাতপর্য পাওয়া যায় মহাভারতে।দাতা কর্নের মৃত্যু হলে পৃথিবী ছেড়ে যাওয়া আত্মাকে যমরাজ স্বর্নসহ দান,দ্রব্যাদি দিয়ে ভোজন আহব্বান করেন।
ভোজনে স্বর্ন দেখে দাতা কর্নের আত্মা বিস্মিত হন।তিনি যমরাজকে ইহার কারন নিয়ে প্রশ্ন করেন।যমরাজ প্রতুত্তরে বলেন, আপনি দানবীর সারাজীবন দান করেছেন এবং ইহা পূণ্যকারক।কিন্তু পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে কোন তর্পন ও শ্রদ্ধাঞ্জলী করেন নি,তাই আপনার জন্য এই ভোজন।উত্তরে দাতা কর্ন বলেন আমি আমার পূর্বপুরুষ সমন্ধ্যে অবগত ছিলাম না,তাই কার্যাদি করতে পারিনি এবং কর্ন এখন কি করনীয় তা যমরাজের কাছে জানতে চান।যমরাজ দাতা কর্ণার আত্মাকে মহালয়ার পিতৃপক্ষে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেন পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে তর্পন করার জন্য।দাতা কর্ণ শ্রাদ্ধাদি শেষে পৃথিবী থেকে প্রস্থান করেন।
শাস্ত্রীয় কারন ছাড়া মহালয়া, সামাজিক,পারিবারিক কারনে অনেক বেশী তাৎপর্যপূর্ন। ইহার ফলে প্রজন্ম তার পূর্বের প্রজন্মদের নাম ও আদর্শ সম্পর্কে জানতে পারেন। এতে পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় হয়।
শুধু তাই নয় তর্পনাধির সময় মন্ত্রে অন্যান্যদের মঙ্গল ও মুক্তিলাভের জন্য প্রার্থনা করা হয়। ইহার ফলে হিংসা,বিদ্ধেষ মুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার বীজ রোপিত হয়।
মন্ত্রে উল্লেখ করা হয় এই যে, অবান্ধব, বান্ধবা বাধ্যেনে জন্মনি বান্ধবা,অর্থাৎ যারা বন্ধু নন অথবা আমার বন্ধু যারা জন্মে, জন্মান্তরের আত্মীয় বন্ধু ছিলেন তাদের সবার আত্মার মুক্তি লাভের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করা হয়।ন মাতা,ন পিতা,ন বন্ধু মানে যার মাতা নাই,পিতা নাই,বন্ধু নাই তাদের জন্য প্রার্থনা করা হয়।
মহালয়ার দিন মা দূর্গা সন্তানাদি,সখী জয়া ও বিজয়াকে নিয়ে দলবলসহ পৃথিবীতে আগমন করেন। এইদিন চন্ডীপাঠ করে মা দূর্গাকে আমন্ত্রন জানানো হয়।
সনাতন হিন্দু সমাজের বেশীরভাগ বাড়িতে ঘট,ফুল, জল,নৈবদ্য সহকারে মা কে আমন্ত্রন জানানো ভক্তি এবং সাথে আলপনা এঁকে মায়ের ধরনীতে ও গৃহে আসার পথকে শোভনীয় করতে শিল্পমনের পরিচয় বহন করেন।
পুরাণ মতে, রাজা সুরথ প্রথম দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করেন। বসন্তে তিনি এই পূজার আয়োজন করায় দেবীর এ পূজাকে বাসন্তী পূজাও বলা হয়। কিন্তু রাবণের হাত থেকে সীতাকে উদ্ধার করতে যাওয়ার আগে শ্রীরামচন্দ্র শরৎকালে দেবী দুর্গার পূজা করেছিলেন। অকালে তথা শরৎকালে অনুষ্ঠিত হওয়া এই পূজা তখন থেকেই অকালবোধন নামে পরিচিত ।
শারদীয় দূর্গাৎসব মহিষাসুর মর্দীনিরুপে বাঙালির ভক্তির বই আরাধনা সমাজে শান্তি,স্থিতি, সার্বজনীলতা,আনায়ন করুক। ভেদাভেদ, হিংসা, ক্রোদ,অশুভ শক্তির বিচরন দূর হয়ে যাক সমাজ থেকে।সামাজিক ভাতৃত্ববোধ, বন্ধন, জ্ঞানন ও ভক্তি বেড়ে উঠুক সকল ভক্তের মাঝে।
আসুন সকলে মহিষাসুর বধের মত নিজের মনের ভেতরে লুকিয়ে থাকা অসুরকে বধ করে সমাজে শান্তি ফিরিয়ে আনি।হানাহানি, মারামারি, বিশৃখ্যলতা বন্ধ করে সম্পৃতির বন্ধনে মিলিতো হই মানব সমাজ।
আসুন অহংকারের বেড়াজাল থেকে বেড়িয়ে, মানুষের পাশে দাড়াই।ভুলে যাই দুস্ত,দুশমন,হাত মেলাই হাতে। আর কদিন পরই শারদীয় দূর্গাৎসব এর মূল আনুষ্ঠানিকতা।সকলকে শারদীয় শুভেচ্ছা।আর হ্যা মনে রাখবেন কাউকে অভুক্ত রেখে নিজে খাওয়া পাপ।তাই উৎসবে জেনো সকলের মুখে হাসি থাকে সমাজের বিত্তবানশ্রেনী সেদিকটায় নজর রাখবেন।
এ কামনায় সকলকে মহালয়ার শুভেচ্ছা।শুভ হোক আপনার চলার প্রতিটি পদক্ষেপ।