Sunday, September 9, 2018

সনাতন ধর্ম

জানি না কতটুকু তুলে ধরতে পেরেছিঃ
সনাতন ধর্ম হচ্ছে মহাসাগর বিশেষ। মনে করা যাক পুকুরের ছোট্ট একটি মাছকে মহাসাগরে ফেলে দেয়া হল। মাছটি সারা জীবন পুকুরের ছোট্ট পরিধিতে জীবন অতিবাহিত করেছে। তার কাছে তার ভূবন ততটুকুই (পুকুর পর্যন্তই সীমাবদ্ধ)। মহাসাগর সম্পর্কে কোন ধারণা লাভ যেমন ছোট্ট মাছের পক্ষে সম্ভব নয়, ঠিক তেমনি দু-একটি গ্রন্থ পড়ে বা কারো মুখ থেতে শুনে সনাতন ধর্ম সম্পর্কে ধারণা লাভ সম্ভব নয়। মহাসাগরের সুবিশাল পরিধি সম্পর্কে ধারণা পেতে যেমন নিয়ম মাফিক পদ্ধতিতে অগ্রসর হতে হয়! ঠিক তেমনি সনাতন ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে হলে আমাদের নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই অগ্রসর হতে হবে।
অনেকেই মনে করে সনাতন ধর্ম হচ্ছে হিন্দু ধর্ম! মূর্তি বা প্রতিমা পূজায় বিশ্বাসী! আবার অনেকেই সনাতন ধর্মকে ‘হিন্দু ধর্ম’ বলে আখ্যায়িত করে! যা নিত্যান্তই ভুল একটি ধারণা। সনাতন ধর্মের ভিত্তি বৈদিক শাস্ত্রের কোথায়ও ‘হিন্দু’ শব্দটির উল্লেখ নেই। নেই এই জন্য যে, তা আধুনিক কালে (ঊনবিংশ শতাব্দীতে) সৃষ্টি হয়েছে! বা কালক্রমে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে সনাতন ধর্মকে ‘হিন্দু ধর্মে’ পরিণত করা হয়েছে! হিন্দু একটি নির্দিষ্ট জাতি! হিন্দু ধর্ম বলতে বোঝায় হিন্দু জাতির ধর্ম! বৈদিক শাস্ত্রের কোথায়ও কোন জাতি, গোষ্ঠী, বর্ণ বা সমাজের ধর্ম হিসেবে সনাতন ধর্মকে অভিহিত করা হয়নি। অভিহিত করা হয়েছে মানব জাতির বা জৈব ধর্ম (জীবের ধর্ম) হিসেবে।
সনাতন ধর্মের প্রকৃত রূপ উন্মোচনের জন্য আমাদের যে ধর্ম গ্রন্থগুলি পাঠ আবশ্যক তা হলো-
১। বেদ-৪টি (ঋকবেদ, সামবেদ, যর্জুবেদ, অথর্ববেদ)
২। উপনিষদ-১০৮টি
৩। গীতা-১টি (৭০০শ্লোক)
৪। ভাগবত-১টি (১৮,০০০শ্লোক)
৫। মহাভারত-১টি (৬০,০০০শ্লোক)
৬। পুরাণ-১৮টি
৭। রামায়ণ-১টি
৮। চৈতন্য চরিতামৃত-১টি
এই গ্রন্থগুলোর পাঠ করলে জানা যাবে সনাতন ধর্মের কলেবর কতো বিশাল আর জ্ঞানগভীর। তবে রামায়ন আর মহাভারতে বৈদিক যুগের ইতিহাস লিপিবদ্ধ। ধর্মের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পেতে আমাদের আশ্রয় নিতে হবে ভাগবতের। তবে উল্লেখিত প্রতিটি গ্রন্থই মহা মূল্যবান আর প্রয়োজনীয়।
মানব জাতির স্বভাব হচ্ছে সহজ এবং সরল বিষয়গুলির প্রতি আসক্ত হওয়া। কঠিন বিষয়বস্তু এড়িয়ে চলা। যা আমাদের সমাজে আমরা পরিলক্ষিত করি। ধর্মের বেলায় ও একই ব্যাপারটি ঘটেছে। এতো বিশাল বৈদিক শাস্ত্রের ধারে কাছে না গিয়ে লোকজন সহজ এবং সরল দেব-দেবীর পূজায় নিজেদের ব্যস্ত রাখে। আর অন্যদিকে আমাদের সমাজের তথাকথিত জন্মগত ব্রাহ্মণ (পুরোহিত বা হোতা) নামধারী ব্যবসায়ীরা তাদের উদর পরিপূর্ণ করার জন্য সমাজে দেব-দেবী পূজার আজ্ঞা দেন। আজ্ঞা বলার কারণ অনেক। সমাজে সহজ সরল মানুষজন তাদের (পুরোহিতদের) অত্যাধিক শ্রদ্ধা ভক্তি করেন। পুরোহিতরা যে সিদ্ধান্ত দেন তা-ই শিরোধার্য হিসেবে ধরে নেন। আমি অনেক নামদারী ব্রাহ্মণের কাছে বৈদিক শাস্ত্র গুলোর নাম শুনতে চাইলে তারা প্রকৃতপক্ষে তা বলতে ব্যর্থ হন। যারা একটি ধর্মের শাস্ত্রীয় গ্রন্থের নাম বলতে অক্ষম, তাদের ব্রাহ্মণ বলার যুক্তি কোথায় আমি বুঝি না! তবে এখনও পুরোহিতদের মধ্যে অনেক জ্ঞানী এবং শাস্ত্রজ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তি রয়েছেন। তবে তাঁরা কেন চুপচাপ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এড়িয়ে যান তা আমার কাছে রীতিমতো বিস্ময়!
দেব-দেবী পূজাকে ভাগবতের আলোকে অপধর্ম হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। অপধর্ম অর্থ্যাৎ ধর্মের সঠিক রূপ নয়। অপধর্মের অনুসারীরা স্বর্গসুখ আর জড় পৃথিবীতে সুখে থাকার আশায় উপরোক্ত পূজা-পাঠ করেন। যা সনাতন ধর্ম কোনভাবেই প্রকৃত রূপ হিসেবে সমর্থন করে না। প্রকৃত ধর্ম হচ্ছে স্বর্গ-নরক-পৃথিবী সবকিছুর ভালবাসা কাটিয়ে আত্মাকে চিন্ময় জগতে নিয়ে পরম ব্রহ্মের সেবায় নিযুক্ত করা। এখানে শত-সহস্র দেবতা-উপদেবতাদের পূজা-পাঠ করার কোন সুযোগ নেই।
অনেকেই হয়ত ভাবেন আধুনিকযুগে এতো সময় কোথায় ঐ সব গ্রন্থগুলোর পাঠ করার। আবার আর্থিক দিকেরও একটি বিষয় এখানে রয়েছে। দেব-দেবী পূজায় কি অর্থ ও সময় খরচ হয় না! বরং মাত্রাতিরিক্ত খরচ হয় বিভিন্ন পূজানুষ্ঠানে! যার এক পঞ্চমাংশ সময় ও অর্থ খরচ করে সনাতন ধর্মের প্রকৃত রূপের অনুসন্ধান সম্ভব।

Thursday, March 22, 2018

পাঁচ হাজার বছর আগে করা শ্রীকৃষ্ণের যে সব ভবিষ্যৎ বাণী বর্তমানে সত্য প্রমানিত !!!


শ্রী কৃষ্ণের পাঁচ হাজার বছর আগে করে যাওয়া ভবিষ্যৎ বাণীঃ




ভগবত গীতা। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, মহাভারতের যুদ্ধের সময় অর্জুনকে বলা কৃষ্ণের বাণী নিয়েই রচিত হিন্দুদের এই ধর্মগ্রন্থ। যুদ্ধে আপনার জনকে মারার বেদনায় তৃতীয় পাণ্ডব তখন মর্মাহত হয়ে পড়েছিলেন। তাঁকে জীবনের সঠিক পাঠ দিতে যে বাণী শ্রীকৃষ্ণ দিয়েছিলেন, তাই পরিচিত ভগবত গীতা নামে। ৫০০০ বছরের পুরনো এই বইয়ে বর্তমান যুগ সম্পর্কে যা যা বলা হয়েছিল, আশ্চর্যজনক ভাবে তার সবই মিলে গিয়েছে। গীতা যাঁরা মন দিয়ে পড়েছেন, তাঁরা জানেন যে এর শেষ অংশে কলি যুগ সম্পর্কে বেশি কিছু ভবিষ্যত্‍বাণী করা হয়েছে।


এই ভবিষ্যত্‍বাণীগুলির কিছু হল -

* ধর্ম, সততা, পরিচ্ছন্নতা, সহ্যশক্তি, ক্ষমাশীলতা, আয়ু, শারীরিক ক্ষমতা এবং স্মৃতিশক্তি - সবই কলিযুগে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হৃাস পাবে।

* কলিযুগে অর্থই মানুষের একমাত্র ক্ষমতা হিসেবে বিবেচিত হবে। আইন ও সুবিচার পাওয়ার সম্ভাবনা আর্থিক ক্ষমতার সঙ্গে যুক্ত থাকবে।

* নারী-পুরুষের মধ্যে সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে অর্থ ও যৌনতাই প্রাধান্য পাবে। নারীত্ব ও পুরুষত্ব বলতে একমাত্র যৌন ক্ষমতা বোঝানো হবে। শুধুমাত্র সাদা সুতো গলায় ঝোলালেই একজন ব্রাহ্মণ হিসেবে পরিচিতি পাবে।

* মানুষের মধ্যে ধর্ম কমবে। বদলে বাড়বে ধর্মের প্রতি বাহ্যিক আড়ম্বর। উপার্জনের নিরিখেই মানুষের শিক্ষা-দীক্ষা বিবেচিত হবে। যে ছল-চাতুরি করে অনেক টাকা রোজগার করে, তাকেও সমাজে উচ্চ-পদস্থ হিসেবে দেখা হবে।
[ads-post]
* শঠতা আর কোনও দোষ হিসেবে দেখা হবে না। টাকা না থাকলে সমাজে কোনও মূল্য থাকবে না। নারী-পুরুষের বিবাহ বন্ধনকে কেবলমাত্র মৌখিক চুক্তি হিসেবে দেখা হবে।

* দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষের ভিড়ে এই পৃথিবী ভরে উঠবে। ছল-চাতুরির দ্বারা ক্ষমতা দেখিয়ে সমাজের যে কোনও স্তরের মানুষ রাজনৈতিক প্রতিপত্তি লাভ করতে পারে।

* খরা, মহামারীর প্রকোপে জর্জরিত হবে সাধারণ মানুষ। তার সঙ্গে বেড়ে চলা করের বোজায় গরীব মানুষের খাবার জোগানোই মুশকিল হয়ে দাঁড়াবে। কখনও অত্যধিক গরম, কখনও অতিবৃষ্টিতে জীবন বিপন্ন হবে মানুষের।

* কলিযুগে নিজের বৃদ্ধ বাবা-মার দায়িত্ব অস্বীকার করবে সন্তান।

* সামান্য কয়েকটা টাকা বা খুব ছোটখাটো ইস্যুতে মানুষ মানুষের প্রাণ নিতে দ্বিধাবোধ করবে না। সামান্য স্বার্থে ঘা লাগলে, সব পুরনো সম্পর্ক ভুলে মানুষ নিজের অতি আত্মীয়েরও চরম ক্ষতি করতে উদ্যত হয়।

Wednesday, March 7, 2018

জয় বাবা লোকনাথ

১৭৩০ খ্রীস্টাব্দে পশ্চিমবাংলার চৌরাশিচাকলা নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পার্শ্ববর্তী গ্রাম (কাঁকড়া) কচুয়া গ্রামে বাস করতেন ভগবান গাঙ্গুলী নামে ভারতবর্ষের নাম্করা এক পন্ডিত। এগার বছর বয়সে গুরু ভগবান গাঙ্গুলীর কাছে একমাত্র বন্ধু বেনীমাধব সহ সন্ন্যাস গ্রহণ এবং গৃহত্যাগ। হিমালয়ের পাদদেশে ভিন্ন ভিন্ন গুহায় , জঙ্গলে কঠিন সাধনায় অতিবাহিত করেন ৪০ বছর। গুরুদেবের আদেশ ও নির্দেশ এক বাক্য পালন করেন দুই ব্রহ্মচারী । হিমালয়ে থাকাকালীন প্রচন্ড ঠান্ডা উপেক্ষা করে কঠিনতম তপস্যার মাধ্যমে লাভ করেন পরম সত্য। কিন্তু নিজের প্রচারবিমুখতার কারনে সেই কষ্টের কথা কাউকে কিছু বলে যাননি। শুধু বলতেন -
" মনে হয় এই বিরাট বিশ্বসৃষ্টির মধ্যে আমি ওতপ্রোত হয়ে রয়েছি, আমার মধ্যেই বিরাজ করছে সমগ্র সৃষ্টি, আর সমগ্র সৃষ্টির আদি ও অন্তে আমিই শ্বাশত হয়ে রয়েছি। সমাধিস্থ অবস্থায় অবস্থানকালে কত বরফ এই শরীরে উপর জমেছে , আবার গলে বরফ হয়ে গেছে , তার খেয়াল করার মতন শরীর - মনের চেতনা তখন আমার কোথায় ।"

বাবা লোকনাথ ও বেনীমাধবের বয়স যখন ৯০ তখন গুরুর বয়স ১৫০ । গুরু ভগবান গাঙ্গুলীর দেহত্যাগের সময় চলে এসেছে তাই তিনি তার দুই শিষ্যকে নিয়ে আসেন ভারতের শ্রেষ্ট মহাযোগী তৈলঙ্গ স্বামীর কাছে। ২০ বছর কাটান তৈলঙ্গ স্বামীর সাথে। পৃথিবীর অনেক দেশ ভ্রমণ করে বেরান পায়ে হেঁটে। তৈলঙ্গ স্বামীর নির্দেশে - বেনীমাধবকে সঙ্গে নিয়ে বাবা লোকনাথ চলে আসেন তিব্বত। তিব্বত থেকে অরুনাচল , অরুনাচল থেকে আসাম। আসামে থেকে যায় বেনীমাধব। এখানেই ১৪০ বছরের বন্ধুত্বের চিরবিদায় হয়। লোকনাথ বাবা চলে আসেন চন্দ্রনাথ পাহাড় (সীতাকুন্ডু) , চট্টগ্রামে।

বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী চন্দ্রনাথ পাহাড়ে গাছের নীচে ধ্যানমগ্ন ছিলেন , হঠাৎ চোখ খুলে দেখেন চারিদিকের আগুনের লেলিহান শিখা , প্রচন্ড ধোঁয়ায় নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, অজ্ঞান হবার মুহুর্তে দেখতে পান এক দীঘর্ দেহী উলঙ্গ মানুষ তাকে কোলে তুলে নিচ্ছেন। যখন জ্ঞান ফিরে পান দেখেন আসে-পাশে কোন জনমানব নেই । তিনি একা পাহাড়ের নিচে শুয়ে আছেন। পরবর্তীকালে বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী নামি ধর্মপ্রচারক হিসাবে পরিচিতি লাভ করেন। ভারত এবং বাংলাদেশে তার অসংখ্য ভক্ত ছিল। তিনি যখন নারায়নগঞ্জ বারদী আসেন তখন বাবা লোকনাথকে দেখে চিনতে পারেন । তিনিই তার জীবন বাঁচিয়েছিলেন। প্রচারবিমুখ বাবা লোকনাথকে তিনি সারা ভারত এবং বাংলাদেশে বাবার অসামান্য যোগশক্তির কথা প্রচার করে বেড়ান।
সীতাকুন্ডু থেকে বাবা লোকনাথ চলে আসেন দাউদকান্দি। এখানেই পরিচয় হয় বারদী নিবাসী - ডেঙ্গু কর্মকারের সাথে। তিনি জোর করা বাবাকে নিয়ে আসেন বারদী।
"ডেঙ্গু তুই আমাকে নিতে চাইছিস, আমি তোর সাথে যেতে প্রস্তুত কিন্তু এই লেংটা পাগলাকে তুই কিভাবে ঘরে রাখবি। লোকে তোকে ছি ছি করবে। সহ্য করতে পারবি। ভেবে দেখ ? " - বাবা বললেন ।
আমি কিছু বুঝিনা , আপনাকে আমার সাথে যেতে হবে। লোকে যা বলে বলুক। শুধু আপনি কথা দেন - বারদী ছেড়ে কোথাও যাবেন না ।

ডেঙ্গুর সাথে বাবা চলে আসেন বারদী। ছোট ছোট ছেলেরা বাবাকে পাগল ভেবে পাথর মারতে থাকে। ডেঙ্গুর পরিবারে বাবাকে নিয়ে শুরু হয় অশান্তি। বারদীর ধনী জমিদার নাগ-পরিবার , তারা বাবাকে তাদের বাড়িতে নিয়ে আসার চেষ্টা করেন কিন্তু বাবা থাকার জায়গা বেছে নেন ছাওয়াল বাঘিনীর নদীর পাড়ের শ্মশানভূমি। ঘন জঙ্গলে ঘেরা এই শ্মশান ভূমি। দিনের বেলায় গ্রামের মানুষ যেতে ভয় পায়। এইখানেই বাবা নিজ হাতে নিজের জন্য তৈরি করেন কুটির। আজ সারা বিশ্বে বাবা লোকনাথ ভক্তদের কাছে এক মহান তীর্থভূমি। লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম হয় এই পূণ্যভূমিতে। কেঁদে , মাটিতে গড়াগড়ি খেতে খেতে নিজেদের দুঃখের কথা জানায় বাবা লোকনাথের কাছে।

বাবা বলতেন - " ওরা বড় দুঃখী , ওরা বড় অসহায়। ছোট ছোট ওদের চাওয়া গুলো পূরণ করে দেওয়ার কেউ নেই , তাই তো ওরা আমার আছে ছুটে আসে , ওদের দুঃখের কথা , কষ্টের কথা আমাকে বলতে । ওদের দুঃখের কথা আমি শুনি বলেই আমার কাছে ওদের যত আবদার, অধিকার। সংসারের কঠিন পথ চলতে চলতে ওরা ক্ষতবিক্ষত , ওদের বিশ্বাস আমিই ওদের দুঃখ দূর করে দিতে পারি। "

ফরিদ্পুর জেলার পালং থানার মহিসা গ্রামে রজনীকান্ত চক্রবর্তীর জন্ম। ঢাকা ওয়ারীতে তিনি ব্রহ্মচারী যোগাশ্রম প্রতিষ্টা করেন। পরে তা ফরিদাবাদে স্থানান্তর করেন। তিনি বাবা লোকনাথের স্মরণে আসেন ১৮৮৬ থেকে ১৮৯০ সালের দিকে। বাবার একজন যোগ্য শিষ্য হিসাবে পরিচিতি লাভ করেন।

বারদীর আশ্রমের কাছেই এক বৃদ্ধা , নাম - কমলা। সম্বল বলতে এক গরু ছাড়া কিছুই ছিল না। দুধ বিক্রি করে দিন চালাতেন। লোকমুখে বাবা লোকনাথে প্রশংসা শুনে এক বাটি দুধ নিয়ে বাবাকে দেখার জন্য চলে আসেন। লোকনাথ বাবা "মা" ডাকতেন বলে পরবর্তীতে তিনি গোয়ালিনী মা নামে পরিচিতি লাভ করেন। শেষ জীবন পর্যন্ত আশ্রমেই কাটান।

ব্রহ্মানন্দ ভারতী ঢাকার বিক্রমপুরের পশ্চিমপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পারিবারিক নাম - তারাকান্ত গাঙ্গুলী। আইন পেশায় ও শিক্ষকতায় জড়িত ছিলেন। লোকমুখে বাবা লোকনাথের কথা শুনে কৌতুহল বশতঃ দেখতে আসেন। পরে সমস্ত বিষয়-সম্পত্তি দান করে বাবার আশ্রমে চলে আসেন। বাবা নতুন নামকরণ করেন - ব্রহ্মানন্দ ভারতী। তাঁর হাতেই প্রথম রচিত হয় - লোকনাথের জীবন কাহিনী ও দর্শন। পরবর্তীতে কুলদানন্দ ব্রহ্মচারী নামে এক বিজয়কৃষ্ণের শিষ্যের লিখিত " সদগুরু সঙ্গ" প্রামান্য সাধনগ্রন্থ রূপে সমাদৃত হয়।

বাবা লোকনাথের অন্যতম প্রধান শিষ্য ছিলেন মথুরা মোহন চক্রবর্তী। "শক্তি ঔষধালয়" -এর প্রতিষ্টাতা। প্রথম জীবনে ঢাকার রোয়াইল গ্রামে হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসাবে কাজ করতে করতে আয়ুর্বেদ ঔষধের ব্যবসা শুরু করেন। ঢাকার দয়াগঞ্জে স্বামীবাগ-এ " শক্তি ঔষধালয়ের ভিতরে প্রথম লোকনাথ ব্রহ্মচারীর মন্দির নির্মাণ করেন।

ব্রহ্মানন্দ ভারতীর মতন আরেক ঢাকার জজকোর্টের উকিল হরিহরণ চক্রবর্তী ও বাবার দর্শন করতে এসে বারদী থেকে যান। হরিহরণের গুরুভক্তিতে প্রসন্ন হয়ে বাবা লোকনাথ নিজের ব্যবহৃত পাদুকা দান করেন। তিনি কাশীতে বাবা লোকনাথের নামে মন্দির প্রতিষ্টা করেন।
সোনারগাঁর গোবিন্দপুর নিবাসী অখিলচন্দ্র সেন , উচ্ছৃখল জীবনযাপনে অভ্যস্ত এক জমিদার পুত্র। দূর-দূরান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ কেন নিঃস্ব এক শ্মশানে থাকা মানুষের কাছে আসেন তা জানার জন্য তিনি দেখতে আসেন। দূর থেকে দাড়িয়ে প্রায় মাঝে মাঝে এসে দেখে যান। একদিন বাবার কাছাকাছি এসে নিজের অশান্তির কথা জানান। নিজের কারনে যেসব মানুষকে কষ্ট দিয়েছে , তাদের সে কষ্টের মোচন করার উপদেশ দেন লোকনাথ বাবা। অখিলচন্দ্র বাড়ি ফিরে গিয়ে সব সম্পত্তি গ্রামের দুঃখী মানুষের নামে দান করে দেন এবং নিঃস্ব এক কাপড়ে বাবা লোকনাথের আশ্রমে এসে উপস্থিত হন। বাবার আশীর্বাদে ও সাধনায় তিনি "সুরথনাথ ব্রহ্মচারী" নামে খ্যাতি লাভ করেন।
বারদী নিবাসী কবিরাজ রামরতন চক্রবর্তীর ছেলে জানকীনাথ । যৌবনে দূরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হন । পিতা সন্তানকে আর বাঁচানোর আশা না দেখে বাবা লোকনাথের আশ্রমে ছেলেকে দান করে যান। বাবা জানকীনাথকে বারদী আশ্রমের দেখাশুনার দায়িত্ব প্রদান করেন। গুরুকৃপায় জানকীনাথ ব্রহ্মচারী এক উচ্চ সাধক হিসাবে প্রতিষ্টিত হন। বাবার নয়নের মনি ছিলেন তিনি , অসম্ভব স্নেহ করতেন জানকীনাথকে। বাবা লোকনাথের সমাধির পাশেই সমাধিস্থ হন জানকীনাথ ব্রহ্মচারী। বাবা লোকনাথের দেহত্যাগের পরে ভক্তদের মনে বাবার অভাব পূরণের চেষ্টা চালিয়ে যান। কথিত আছে - বাবা দেহত্যাগের আগে সমস্ত অলোকিক শক্তি জানকীনাথ ব্রহ্মচারীকে দান করে যানএবং জানকীনাথের কাছে জানানো যে কোন আর্জি সরাসরি বাবা লোকনাথের কানে পৌছে। বাবার সমস্ত শিষ্যের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ট হলেন জানকীনাথ ব্রহ্মচারী। তাই তিনি বাবা লোকনাথের সাথে সমভাবে পূজিত হন।

আজ বাবা লোকনাথের তিরোধান দিবস। মৃতু্য শরীরের ধর্ম। এই পরিবর্তনশীল জগতে যার জন্ম আছে তার মৃতু্য সুনিশ্চিত। আমরা বিশ্বাস করি আত্মা অবিনাশী। তার জন্ম নেই, মৃতু্য নেই। লোকনাথ বাবা ব্রহ্মানন্দ ভারতীকে বলেছেন - " আমি মৃতু্যর সময় অতিক্রম করিয়া বাঁচিয়া রহিয়াছি। এই অবস্থায় নিদ্রা আসিলে আমার মৃতু্য ঘটিবে। "
মহাপ্রয়াণের কয়েকদিন আগে ভক্তদের কাছে প্রশ্ন করে বসেন - " বল দেখি দেহ পতন হলে কিরূপ সৎকার হওয়া ভাল ? " এবং ভক্তদের অগ্নি দ্বারা দগ্ধ করার নির্দেশ দান করেন এবং ১৯শে জৈ্যষ্টে দেহ ত্যাগ করবেন বলে ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
সেবার ১৯শে জৈ্যষ্ট ছিল রবিবার, সকাল হতে হাজার ভক্তের সমাগম হয় বারদীর আশ্রমে। দুঃখভারাক্রান্ত মনে গোয়ালিনী মা বাল্যভোগ তৈরি করে নিজ হাতে খাইয়ে দেন লোকনাথ বাবাকে। ভক্তদের কান্না শুনে ঘর থেকে বেরিয়ে বলেন - " ওরে তোরা এত চিন্তায় কাতর হছিস কেন? আমি কি মরে যাব। কেবল এই জীর্ণ পুরাতন শরীরটা পাত হবে, কিন্তু আমি আছি , যেমন তোমাদের মাঝে ছিলাম, ঠিক তেমনই তোদের কাছেই থাকবো। আমার মৃতু্য নেই। তোরা ভক্তি বিশ্বাস নিয়ে আমাকে একটু আদর করে ডাকলে দেখবি আমি তোদের কত কাছটিতে আছি, এখনও শুনছি , তখনও শুনব। এ কথা মিথ্যা হবে না। "
সকল ভক্তদের খাবার গ্রহনের নির্দেশ দিয়ে তিনি আসন গ্রহন করেন। সময় সকাল ১১.৪৫ । বাবার আর কোন নাড়াচড়া না দেখে ভ্ক্তগণ কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। বুঝার আর বাকি থাকে না বারদীর প্রাণপুরুষ আর নেই, শোকের ছায়া নেমে আসে বারদী আশ্রমে। সমবেত কন্ঠে তখন উচ্চারিত হয় -
জয় বাবা লোকনাথ - জয় বারদীর ব্রহ্মচারী ।

Thursday, March 1, 2018

আজ শুভ দোল পূর্ণিমা এবং ভগবান শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর আবির্ভাব তিথি ও গৌর পূর্ণিমা।

আজ শুভ দোল পূর্ণিমা এবং ভগবান শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর আবির্ভাব তিথি ও গৌর পূর্ণিমা।
আসুন সকলে জেনে নিই দোল পূর্ণিমা বা হোলি কি ?
হিন্দু ধর্ম অনুসারে চারটি যুগ-সত্যযুগ, ত্রেতাযুগ, দ্বাপরযুগ এবং কলিযুগ। বর্তমানে চলছে কলিযুগ। এর আগের দ্বাপরযুগ থেকে শ্রীকৃষ্ণের দোলযাত্রা বা দোল উৎসব চলে আসছে। বলা হয় ১৪৮৬ সালের এই পূর্ণিমা তিথিতেই শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু আবির্ভাব হয় বলে একে গৌর-পূর্ণিমা নামেও অভিহিত। তবে এর মূল তাৎপর্য হলো রাধা-কৃষ্ণের সম্পর্কের উপাখ্যানে। ফাল্গুনী পূর্ণিমা তিথির এ দিনে বৃন্দাবনের নন্দন কাননে শ্রীকৃষ্ণ আবির ও গুলাল নিয়ে তার সখী রাধা ও তেত্রিশ হাজার গোপীর সঙ্গে রঙ ছোড়াছুড়ির খেলায় মেতে ছিলেন। এর স্মরণে এ দিন সকালে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও রাধার বিগ্রহ আবির ও গুলালে স্নান করিয়ে দোলায় চড়িয়ে কীর্তন গান সহকারে শোভাযাত্রা বের করা হয়। এরপর কৃষ্ণভক্তরা আবির ও গুলাল নিয়ে পরস্পর রঙ খেলেন। এ সব দিক থেকে দোল উৎসবকে দুইভাবে দেখা যায়- এবার আসি গৌর পুর্নিমার কথায়। হিন্দুধর্মের পৌরাণিক উপাখ্যান ও শ্রীচৈতন্যের আবির্ভাব।। শ্রী গৌর সুন্দর হলেন কলি যুগের সাক্ষাৎ কৃষ্ণ অবতার।কলির অধঃপতিত জীবদের করুনা করতে তিনি আবির্ভূত হলেন শ্রীধাম নবদ্বীপে।

কিন্তু সবাইকে অবাক করে তিনি বেছে নিলেন ইংরেজি 1486 সালের ফাল্গুন মাসের এই পুর্নিমা তিথি তথা দোল পুর্নিমার এই পুন্য তিথিকে।যেন আনন্দ উৎসবে এক নতুন মাত্রা যোগ করলেন।আর সবচেয়ে অবাক করা বিষয়টি হচ্ছে ঐদিন সন্ধ্যায় মহাপ্রভুর আবির্ভাবের সময় হঠাৎ করে চন্দ্র গ্রহণ শুরু হয়ে যায়।অর্থাৎ পুর্নিমার মাঝে চন্দ্র গ্রহণ।যাকে বলা হয় eclipse of full moon যা জোতির্বিজ্ঞানের ইতিহাসে অত্যন্ত বিরল একটি সন্ধিক্ষণ।শত বছরে এক দুইবার খুবই অল্প সময়ের জন্য এই সন্ধিক্ষণগুলো আসে।তাই মহাপ্রভুর জন্মের এই সময়কে বলা হয় Auspicious সময়।এই রহস্যময় সময়েই দিক বিদিক আলো করে উলুধ্বনি আর শঙ্খনাদের গর্জনে শচীমাতা আর জগন্নাথ মিশ্রের ঘরে আবির্ভূত হলেন শ্রীম্মন মহাপ্রভু (মহাপ্রভুর জয় হোক) দোলের আগের দিন খড়, কাঠ, বাঁশ ইত্যাদি জ্বালিয়ে উৎসবের অঙ্গ হিসেবে কেউ কেউ তাতেও মেতে ওঠেন৷ যা হোলিকাদহন বা নেড়াপোড়া নামে পরিচিত। সাধারণ উত্তর ভারতে হোলি উৎসবটি বাংলার দোলযাত্রার পরদিন পালিত হয়। তবে কোনও কোনও বছর হোলি এবং দোল একই দিনে পড়তেও দেখা গিয়েছে৷
এদিকে স্কন্দপুরাণ অনুসারে ফাল্গুনমাহাত্ম্য গ্রন্থাংশে হোলিকা ও প্রহ্লাদের উপাখ্যান কথা শোনা যায়। হোলিকা ছিলেন মহর্ষি কশ্যপ ও তাঁর পত্নী দিতির পুত্র হিরণ্যকশিপুর ভগিনী। ব্রহ্মার বরে হিরণ্যকশিপু দেব ও মানব বিজয়ী হয়ে দেবতাদের অবজ্ঞা করতে শুরু করেন। এদিকে তাঁরই পুত্র প্রহ্লাদ ছিলেন বিষ্ণুর ভক্ত। প্রহ্লাদ বিষ্ণুকে নিজের পিতার উপরে স্থান দেওয়ায় ক্রুদ্ধ হয়ে হিরণ্যকশিপু তাঁর নিজের পুত্রকে পুড়িয়ে মারার আদেশ দেন। দাদার আজ্ঞায় হোলিকা প্রহ্লাদকে কোলে নিয়ে আগুণে প্রবেশ করেছিলেন কারণ তার বর ছিল আগুণে প্রবেশ করলেও তিনি অক্ষত থাকবেন। কিন্তু সেই বরের ক্ষেত্রে শর্ত ছিল হোলিকাকে একা আগুণে প্রবেশ করতে হবে৷ সেই শর্ত ভুলে সে যখন প্রহ্লাদকে কোলে নিয়ে আগুণে ঝাঁপ দিলে বিষ্ণুর কৃপায় প্রহ্লাদ অক্ষত থাকলেও আগুনে পুড়ে হোলিকারই মৃত্যু হয়। সেই হোলিকার এই অগ্নিদগ্ধ হওয়ার কাহিনিকে ভিত্তি করে দোলের আগের দিনে হোলিকাদহন বা চাঁচর উৎসবের আয়োজন করা হয়। যা আবাক দুষ্টের দমন শিষ্টের পালনের প্রতীক স্বরূপ হিসেবে দেখা হয়৷ এদিকে আবার রাধা-কৃষ্ণকে ঘিরে অন্য এক কাহিনিও প্রচলিত-শ্রীকৃষ্ণ এক দিন বৃন্দাবনে রাধা এবং তার সখীদের সঙ্গে খেলা করছিলেন। সে সময় হঠাৎ রাধা এক বিব্রতকর অবস্থার মুখোমুখি হয়ে লজ্জিত হন। শ্রীকৃষ্ণ রাধার লজ্জা ঢাকতে এবং বিষয়টি তার সখীদের আবির খেলা শুরু করেন। তাদের সবাইকে আবির দিয়ে রাঙিয়ে দেন। এ আবির খেলার স্মরণে হোলি উৎসব পালন করা হয়ে থাকে বলে প্রচলিত আছে। এ ছাড়া বলা হয়ে থাকে, কৃষ্ণ নিজের কৃষ্ণ রঙ ঢাকতে বিভিন্ন ধরনের রঙ মাখিয়ে রাধার সামনে হাজির হন। সেই থেকে এ উৎসবের শুরু।

Saturday, February 24, 2018

শিবের সাতটি রহস্য


শিবের সাতটি রহস্যঃ-

১) সাপঃ সর্প হচ্ছে সদা জাগ্রত থাকার প্রতীক। যদি আপনার গলায় একটি সাপ প্যাঁচানো থাকে, তাহলে আপনি কিছুতেই
ঘুমাতে পারবেন না।

২) ভষ্মঃ এটা জীবনের অনিত্যতাকে স্মরন করিয়ে দেয়। এটা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে আমাদেরও একদিন ভষ্মে পরিণত হতে হবে।

৩) চন্দ্রঃ চন্দ্র সর্বদাই মনের সাথে সম্পর্কিত। এটি জীবনের সকল পরিস্থিতিতে সুখী থাকা এবং মনের উপর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতার প্রতীক।

৪) ডমরুঃ এটা দেখতে ইনফিনিটি চিহ্নের মত। যা শিবের অসীম তথা উন্মুক্ত চিন্তাচেতনার প্রতীক।

৫) ত্রিশুলঃ শিব প্রকৃতির তিনগুন নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন, এটি তারই প্রতীক। তিনি এটির মাধ্যমে সকলকে নিজ নিজ ধর্ম
পালনে উৎসাহিত করে থাকেন।

৬) নীলাভ শরীরঃ আকাশ অন্তহীন, শিবও তেমনি অন্তহীন। নীলাভ শরীর অন্তহীন আকাশের মতই শিবের অন্তহীনতা
তথা অসীমতার প্রতীক।

৭) গঙ্গাঃ গঙ্গা নিষ্কলুষ জ্ঞানের প্রতিনিধিত্ব করে। যখন শিবের মতই আমাদের হৃদয় স্থির হয়, তখনই তাতে নিষ্কলুষ জ্ঞান প্রবাহিত হয়।

🕉️ হর হর মহাদেব 🕉

Thursday, February 22, 2018

শ্রীশ্রী লোকনাথ বাবার অষ্টোত্তর শতনাম

লোকনাথ নাম রাখিল গুরুভগবান।
১ প্রেমবতার(তুমি) ঠাকুর(তুমি) নারায়ণ।।
২ অগতির গতি (তুমি)তুমি লোকনাথ।
৩ সুরলোকে ছিলে তুমি হয়ে বিশ্বনাথ।।
৪ নাম দিল মা কমলা আমারযাদুমণি।
৫ ভক্তবাঞ্ছা নাম দিল যতেক্জ্ঞানী গুণী।।
৬ শ্রীগোপাল নাম দিল যতেক্প্রতিবাসী।
৭ মহাযোগী তুমি যে গো জানে ভারতবাসী।।
৮ দেবপ্রসাদ নাম রাখিল যতভক্তগণে।
৯ ব্রহ্মচারী রূপ দিল গুরুভগবানে।।
১০ একাদশে নাম পেলে বালকসন্ন্যাসী।
১১ ভ্রাতাগণ নাম দিলতুমি গৌরশশী।।
১২ বিপদবারণ হরি দিল ডেঙ্গুকর্মকারে।
১৩ বিশ্বগুরু হয়ে থাকবিশ্বচরাচরে।।
১৪ গোয়ালিনী মা দিল নামভক্তি-মুক্তিদাতা।
১৫ জীবরূপী শিব তুমি গুরুতুমি জগৎত্রাতা।।
১৬ পাপী তাপী নাম দিলতুমি ক্ষমাসার।
১৭ দয়াময় নামে ফের এ বিশ্বমাঝার।।
১৮ বাৎসল্য পারাপার নাম দিলসাধক বেণী।
১৯ ভবরোগের বৈদ্য তুমি,তোমারে প্রণমি।।
২০ ত্রিকালদর্শী নাম রাখিলবিজয় গোস্বামী।
২১ সিদ্ধযোগী নাম দিলত্রৈলঙ্গস্বামী।।
২২ গুরু গোঁসাই নাম দিল ভক্তভজলে রাম।
২৩ মঙ্গলকারী বাবা তুমি বারদী তীর্থধাম।।
২৪ অনাথ শরণ নামপেলে অনাথের কাছে।
২৫ গীতার ভগবান তুমি ভক্তবৃন্দনাচে।।
২৬ ভবের কান্ডারী তুমি ভবপারাপার।
২৭ সিদ্ধিদাতা গণেশতুমি করুণা অপার।।
২৮ নিত্যসিদ্ধ পুরুষ নামরামকৃষ্ণ দিল।
২৯ কলির কলুষহারী নামযে রহিল।।
৩০ ভুবন মঙ্গল নামে রও এইভুবনের মাঝে।
৩১ সচ্চিদানন্দবাবা তুমি ভক্তহৃদে বাজে।।
৩২ স্বজন পালক নাম তোমারগো ব্রহ্মচারী।
৩৩ দুর্জনেরকাছে তুমি চক্রধারী।।
৩৪ ব্যথাহারী ডাকে তোমায় যতব্যথিত জনে।
৩৫ অভয়দাতা নাম দিল যতঅভাজনে।।
৩৬ চিরসুন্দর তুমি প্রভু বিশ্বচরাচরে।
৩৭ জ্ঞানমূর্তি বাবা লোকনাথযে তোমা স্মরে।।
৩৮ সর্বহারারকাছে তুমি নির্ধনের ধন।
৩৯ সর্ব ঘটের ঘটি তুমি থাকসর্বক্ষণ।।
৪০ বেদের বর্ণিতশব্দে তুমি সেই কবি।
৪১ আলোকজ্যোতি রূপে সদা উদ্ভাসিতরবি।।
৪২ অচিন্তের চিন্তা তুমি জগতচিন্তাময়ী।
৪৩ প্রাণীর প্রাণ তুমি ভূলোকস্বামী।।
৪৪ ব্রহ্মের সন্তানমোরা তুমি ব্রহ্মময়।
৪৫ অধম তারণ আর এক নাম প্রভুতোমার হয়।।
৪৬ ভীতজনে ডাকে তোমারবরাভয় নামে।
৪৭ বিশ্বরূপে বিরাজ প্রভু এধরা ধামে।।
৪৮ শান্তিদাতা নাম দিলরোগি শোকিগণ।
৪৯ বিপত্তারণনামে ডাকে তোমা সর্বজন।।
৫০ অনঙ্গ চৈতন্য নাম তোমারযে প্রভু।

৫১ নিত্য নিরঞ্জন নাম ভুলিবনা কভু।।
৫২ জীবের প্রভু তুমি জীবেরজীবন।
৫৩ দ্রষ্টা তুমি দৃশ্যতুমি হেরি সর্বক্ষণ।।
৫৪ জগন্নাথ আর এক নামজানে ধরাবাসী।
৫৫ মহাদেব হয়ে থাক তীর্থবারাণসী।।
৫৬ জয় জয় গুরু তোমা ত্রিতাপহারী।
৫৭ বিরাজি সবা প্রভু গোলকবিহারী।।
৫৮ কেউবা তোমার নাম রাখিলবাবা তারকনাথ।
৫৯ শক্তিধর আরেক নাম তোমারলোকনাথ।।
৬০ ঋষি শ্রেষ্ঠ গুরু তোমার হলযে নাম।
৬১ বিশ্ব মানব তরে এলে মানবপরাণ।।
৬২ পরব্রহ্ম তুমি প্রভুকরুণা নিদান।
৬৩ সপ্ত ঋষিরঋষি তুমি করুণা মহান।।
৬৪ সর্ব দিকে আছ তুমি নামদিগম্বর।
৬৫ পাতঞ্জলেরকাছে তুমি হইলে ঈশ্বর।।
৬৬ কুল নারীরকাছে তুমি জাতি কুল মান।
৬৭ জ্ঞানী জীবেরকাছে হইলে তুমি যে মহান।।
৬৮ বিষ্ণুরূপে হেরে তোমায় যতবৈষ্ণবগণ।
৬৯ শান্তগণে শক্তিরূপে পূজে সর্বক্ষণ।।
৭০ হইল আর এক নাম গৌরাঙ্গসুন্দর।
৭১ বাসুদেব নামে ব্যক্ত বিশ্বচরাচর।।
৭২ আদি দেব তুমি প্রভু পুরুষপরাৎপরে।
৭৩ অচিন্তেরচিন্তামণি যিনি চিন্তা করে।।
৭৪ কেহ তোমার নাম দিলঅন্নদাতা প্রভু।
৭৫ শান্তিসাগর আর এক নামভুলিব না কভু।।
৭৬ চিরকাল আছ অলক বিহারী।
৭৭ চিরকাল রবে নামবাবা ব্রহ্মচারী।।
৭৮ মৃত্যুঞ্জয়নামে তুমি রহিবে ধরাতে।
৭৯ লুপ্ত আযের আচার ধর্মসবারে শিখাতে।।
৮০ গুরুর গুরু নামরাখে স্বামী শিবানন্দ।
৮১ মোহ তিমিরহর নাম দিলশ্রীমৎ ব্রহ্মানন্দ।।
৮২ রজনীকান্ত নাম দিলসাক্ষী দিবাকর।
৮৩ অভয়াচরণ দিল নামতুমি বিঘ্নহর।।
৮৪ মনোহর রূপ তোমার মনোহরণনাম।
৮৫ দয়ারাম প্রভুরূপে বহালে যে বান।।
৮৬ সুরথ নাথ নাম দিলতুমি স্পর্শমণি।
৮৭ মূর্তিমান গীতা নাম দিলযামিনী।।
৮৮ ব্যথিতেরব্যাথাহারী তুমি লোকনাথ।
৮৯ তুমি সৃষ্টি স্থিতি লয়তোমায় প্রণিপাত।।
৯০ সগুণ নির্গুণ নাম তোমারযে গো হয়।
৯১ প্রকাশিছে তবআলো তুমি জ্যোতির্ময়।।
৯২ ক্ষুধাতুরেরক্ষুধাহারী তুমি মূর্তিমান।
৯৩ দুঃখী জনের সুখ তুমি পরমসুখন নাম।।
৯৪ অলক্ষের আলেখ্যতুমি ওগো ব্রহ্মচারী।
৯৫ সর্বজনের কাছে প্রভুতুমি শান্তি বারি।।
৯৬ জানকী রাখিল নাম জাতিরজনক।
৯৭ বিঘ্নহর নাম রাখিল তোমারসেবক।।
৯৮ আজানুলম্বিত বাহু তুমি রামঅবতার।
৯৯ চন্দ্রমা তপন আঁখিযুগলযে যুগাবতার।।
১০০ সংসার বৃক্ষ নাম দিল যতেকসংসারী।
১০১ তুমি গুরু লোকনাথওগো ব্রহ্মচারী।।
১০২ মাতা নাম দিয়া গুরু কেহতোমা ভজে।
১০৩ শ্রীরাধিকা রূপে ছিলে সখী সনে ব্রজে।।
১০৪ কেউবা হেরে শ্যামরূপে কেউবা হেরে শ্যামা।
১০৫ তুমি প্রভু মনোরম তুমিইমনোরমা।।
১০৬ মৃন্ময়েতে চিন্ময় হয়ে থাকসর্বক্ষণ।
১০৭ সর্বভূতের আত্মা প্রভুতুমি পরম ধন।।
১০৮ অষ্টোত্তর শতনাম সমাপ্তহৈল।
জয় বাবা লোকনাথ সবে মিলি বল। এই নাম পাঠ কিংবা শুনে যেইজন। বাবার অসীমকৃপা লভে সেইজন। লোকনাথ বাবার শতনামমাহাত্ম্যঅষ্টোত্তর শতনামমহাপুণ্যময়। শ্রবণ পঠনে সর্বপাপ নাশহয়।।বাবার অসীমকৃপা লভে সেইজন। ভক্তিভরে এই নাম যে করে পঠন। অষ্টোত্তর শতনাম যেবা রাখে ঘরে। রোগ শোক গৃহ হতে যায় সবদূরে। ব্যঘ্রভয় সর্পভয় আর চৌযভয়। ভূত-প্রেতাদির সর্ববাধা দূর হয়। অপুত্রের পুত্র হয় ধনার্থীরধন। সদাবশে থাকে তার আত্মীয়স্বজন।।ধনৈশ্বরয বাড়ে তার বাবারকৃপাতে। সর্ববিঘ্ন দূর হয় তাহারগৃহেতে। জলে স্থলে রণে বনে যেখানেই থাক।জয় বাবা লোকনাথ বলে তাঁরে ডাক। অবশ্যই বাবা তারে করিবে রক্ষণ। ইহাতে সন্দেহ নাইজেনো সর্বজন। জয় জয় লোকনাথ জগতেরপতি। তব পদে অধমের থাকে যেনমতি।
জয় বাবা লোকনাথ, জয়মা লোকনাথ, জয় গুরুলোকনাথ, জয় শিব লোকনাথ,জয় ব্রহ্ম লোকনাথ।

মা লক্ষ্মীর কৃপালাভের কিছু মন্ত্র ও আচার-অনুষ্ঠান !

মা লক্ষ্মীর চারটি হাত। ধর্ম, কর্ম, অর্থ ও মোক্ষ— হিন্দুশাস্ত্রে এই চার হাতের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করাহয়েছে এভাবেই। যাঁরা মনে করেন মা লক্ষ্মী শুধুমাত্র ধনের দেবী, তাঁরা সম্ভবত দেবীর এই ব্যাখ্যা সম্পর্কেঅবহিত নন।
সমুদ্রমন্থন থেকে উদ্ভব মা লক্ষ্মীর। কিন্তু সবার আগে জানা প্রয়োজন তিনি কে? কীভাবে আবির্ভূতহলেন তিনি। এই নিয়ে নানা মত রয়েছে। কখনও বলা হয় তিনি ছিলেন ঋষি ভৃগুর সন্তান এবং সমুদ্রমন্থনে তাঁর পুনর্জন্ম হয়। আবার অন্য একটি মত অনুযায়ী, তিনি সমুদ্রদেব বরুণের কন্যা।
মা লক্ষ্মীরও আগে আবির্ভূত হয়েছিলেন দেবী সরস্বতী। একটি পৌরাণিক গল্পে বলা হয়েছে, ব্রহ্মার সাত সন্তান, সপ্তঋষির মধ্যে ৬জনই দেবী সরস্বতীর আরাধনা করে দৈবজ্ঞান লাভ করেন। কিন্তু প্রশ্ন তোলেন মহর্ষি ভৃগু। মানবশরীরের ক্ষুধা নিবারণ কীভাবে ঘটে, সেই খোঁজে তিনি বেরিয়ে পড়েন। শেষ পর্যন্ত উত্তরটি পান সমু্দ্রদেববরুণের কাছে।
মহর্ষি ভৃগু তার পরেই উপলব্ধি করেন যে মগজের বা মননের পুষ্টিলাভ যেমন হয় দেবী সরস্বতীর আরাধনায় তেমনই নশ্বর শরীরের পুষ্টির জন্য মা লক্ষ্মীর আবাহন ও পূজা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই মা লক্ষ্মীকে শুধুমাত্র ধনদেবী হিসেবে দেখলে তাঁর মহিমার সম্পূর্ণটা দেখা হয় না।
তাঁর আশীর্বাদ মানুষের ক্ষুধা নিবারণের জন্য, গৃহস্থের সার্বিক কল্যাণের জন্য। আর এই দুয়ের জন্যই প্রয়োজন অর্থের। কিন্তু সেই অর্থ পাওয়ার পরে মানুষ তার প্রয়োগ কীভাবে করছে, সেদিকে তাঁর কড়া নজর। অপচয় বা অন্যায় প্রয়োগ তিনি সইতে পারেন না, তাই তিনি চঞ্চলা।

 যে মানুষ ধর্মের পথে থাকে, সৎকর্মের মাধ্যমে ধন উপার্জনে করতে যে তৎপর, তাঁকেই কৃপা করেন মা লক্ষ্মী। মোট ১৬ প্রকার সম্পদ প্রদান করেন তিনি— খ্যাতি, জ্ঞান, সাহস ও শক্তি, জয়, সুসন্তান, বীরত্ব, স্বর্ণ, অন্যান্য রত্নরাজি, শস্য, সুখ, বুদ্ধি, সৌন্দর্য, উচ্চাশা, উচ্চভাবনা, নৈতিকতা, সুস্বাস্থ্য এবং দীর্ঘ জীবন।
আবার মা লক্ষ্মীর কৃপালাভের পরেও যে ধর্ম ও সৎকর্মের পথ থেকে বিচ্যুত হয় না, ব্যক্তিগত স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে উপার্জিত অর্থ মানুষের উপকারে ব্যয় করে, তারই প্রকৃত মোক্ষলাভ ঘটে।
অর্থাৎ একটি সুস্থ, সুন্দর, সৎ জীবনদর্শনের কথা উঠে আসে মা লক্ষ্মীর মহিমা বর্ণঁনায়। তাই দেবী অপরিচ্ছন্ন জায়গায় কখনও থাকেননা, নিয়মানুবর্তিতা, সুব্যবহার এবং পরিমিত জীবনযাপন পছন্দ করেন। বাংলায় লক্ষ্মীপুজোর সংস্কৃতি ভারতের অন্যান্য রাজ্যের থেকে একটু অন্যরকম।
যেমন ভারতের বেশিরভাগ অঞ্চলে শুক্রবার মহালক্ষ্মীর উপবাস রাখা হয় ও বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়। ওদিকে বাংলার ঘরে ঘরে বৃহস্পতিবারই লক্ষ্মীবার। কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো দক্ষিণ ভারত ও পূর্ব ভারতে অত্যন্ত জনপ্রিয় হলেও উত্তর ও পশ্চিম-ভারতে মা লক্ষ্মীর আবাহন মূলত হয় ধনতেরাস-দিওয়ালি তিথিকে কেন্দ্র করে।
কিন্তু বছরে মাত্র একটি বা দু’টি দিন নয়, শাস্ত্রজ্ঞরা বলেন যে ধারাবাহিকভাবে, যদি সারা বছরই কিছু আচার-অনুষ্ঠান পালন করা যায় এবং ভক্তিভরে কিছু নির্দিষ্ট মন্ত্রোচ্চারণ করা যায়, তবে তাঁর কৃপালাভের পথ সুগম হয়।
ভক্তরা নানাভাবে দেবদেবীর আরাধনা করেন। হিন্দুধর্ম ও হিন্দু আচারের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এর বৈচিত্র যা অঞ্চলবিশেষে যেমন আলাদা, তেমনই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমাগত মেটামরফোজড হয়ে চলেছে।
শ্রীরামকৃষ্ণ যেমন বলেন, যত মত তত পথ, তেমনই আচার-অনুষ্ঠানের কোনও শেষ নেই এবং সেই সব পথই ধাবিত হয় ঈশ্বরের দিকে। মনে যদি ভক্তি থাকে, তবে যে পথেই আরাধনা করা হোক না কেন, ঈশ্বরের কাছে সেই প্রার্থনা অবশ্যই পৌঁছয়। নীচে উল্লিখিত আচারগুলি ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে প্রচলিত।
১. ঠাকুরঘরে বা ঠাকুরের সিংহাসনে কড়ি এবং শঙ্খ রাখা খুবই শুভ গৃহের কল্যাণের জন্য। 
২. দক্ষিণাবর্ত শঙ্খকে বলা হয় মা লক্ষ্মীর শঙ্খ। লাল, সাদা বা হলুদ রংয়ের একটি পরিষ্কার কাপড়, একটি রুপোর পাত্র অথবা মাটির পাত্রের উপর রাখতে হয় এই শঙ্খ। এই শঙ্খের মধ্য দিয়েই মা লক্ষ্মীর আশীর্বাদ প্রবাহিত হয় বাসস্থানে। 
৩. প্রতিদিন মা লক্ষ্মীর প্রতিমা বা পটের সামনে দু’টি ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালালে তা মঙ্গল। এর সঙ্গে পদ্ম, নারকেল ও ক্ষীরের নৈবেদ্য দিলে প্রসন্ন হন দেবী।
 ৪. একটি বাঁশের বাঁশিকে সিল্কের কাপড়ে মুড়ে ঠাকুরের সিংহাসনে রাখলে মা লক্ষ্মী প্রসন্ন হন কারণ বাঁশিহল বিষ্ণুর অবতার শ্রীকৃষ্ণের প্রিয়। তাই মা লক্ষ্মীরও অতি প্রিয়।
 ৫. শুধুমাত্র পুজোর দিনে নয়, প্রতিদিনই যদি দেবীর পায়ের চিহ্ন আঁকা ভাল। প্রতিদিন না পারলে বৃহস্পতিবার অথবা শুক্রবার এবং মা লক্ষ্মীর পুজোর তিথি থাকলে তো অবশ্যই। 
৬. যিনি প্রতি শুক্রবার পরমান্ন বা মিষ্ট অন্ন দিয়ে গোসেবা করেন তাঁর প্রতি বিশেষ প্রসন্ন হন দেবী।
৭. বলা হয় সমস্ত দেবতা বাস করেন তুলসি বৃক্ষে আবার অন্য একটি মত অনুযায়ী দেবী তুলসি হলেন মা লক্ষ্মীরই এক রূপ। তাই বাড়িতে তুলসি বৃক্ষ থাকলে এবং সেখানে প্রতিদিন সেখানে প্রদীপ জ্বাললে তুষ্ট হন মা লক্ষ্মী।
 ৮. প্রতি শুক্রবার পদ্মমূল থেকে তৈরি নয়টি সলতে দিয়ে একটি মাটির প্রদীপ মা লক্ষ্মীর পট বা প্রতিমার সামনে জ্বাললে তা গৃহে প্রাচুর্যের সমাহার ঘটায়।
 ৯. ধারাবাহিকভাবে ১২ দিন ধরে সম্পূর্ণ ভক্তিভরে লক্ষ্মী দ্বাদশ স্তোত্র ১২ বার উচ্চারণ করলে ঋণমুক্তি ঘটে।
 ১০. প্রতিদিন স্নান করে শুদ্ধ হয়ে লক্ষ্মী গায়ত্রী মন্ত্র ১০৮ বার জপ করলে অত্যন্ত সন্তুষ্ট হন মা লক্ষ্মী। এই মন্ত্র জপ করার সময় পদ্মবীজের মালা ব্যবহার করলে ভাল। 
১১. এছাড়া টানা ৩০ দিন ধরে মা লক্ষ্মীর প্রতিমা বা পটের সামনে নিষ্ঠাভরে শ্রী সুক্ত পাঠ করলে বিশেষ প্রসন্ন হন দেবী। শ্রী সুক্ত হল ১৫টি ভার্সের একটি সম্মেলন।

 লক্ষ্মীপূজায় নিষিদ্ধ বিষয় : লক্ষ্মীপূজায় লোহা বা স্টিলের বাসনকোসন ব্যবহার করবেন না। লোহা দিয়ে অলক্ষ্মী পূজা হয়। তাই লোহা দেখলে লক্ষ্মী ত্যাগ করে যান।লক্ষ্মীপূজায় ঘণ্টা বাজাতে নেই। লক্ষ্মীকে তুলসীপাতা দিতে নেই। কিন্তু লক্ষ্মীপূজার পর একটি ফুল ও দুটি তুলসীপাতা দিয়ে নারায়ণকে পূজা করতে হয়। লক্ষ্মীপূজা সাধারণত সন্ধ্যাবেলা করে, তবে অনেকে সকালেও করে থাকেন। সকালে করলে সকাল ন-টার মধ্যেকরে নেওয়াই ভাল। পূজার পর ব্রতকথা পাঠ করতে হয়।

কিছু বিষয় : লক্ষ্মীপূজা প্রতিমা, সরা বা লক্ষ্মীর ঝাঁপিতে হয়ে থাকে। পূর্ববঙ্গীয়রা সাধারণত সরা বা প্রতিমায় লক্ষ্মীপূজা করেন, পশ্চিমবঙ্গীরা লক্ষ্মীর ধানপাত্রে বা ঘটে পূজা করেন। কারো কারো বিশেষ পারিবারিক লক্ষ্মীপ্রতীক রয়েছে। যাঁর যা আছে, বা যাঁদের যা নিয়ম তাঁরা তাতেই লক্ষ্মীপূজা করবেন। পূজার পূর্বে পূজাস্থান পরিষ্কার করে নিয়ে ধূপ দীপ জ্বালিয়ে দেবেন। পূজাস্থানে লক্ষ্মীর পা-সহ আলপনা আঁকবেন। ঘটের পাশে একটি লক্ষ্মীর পা অবশ্যই আঁকবেন।
পূজার সময়অন্যমনস্ক হবেন না বা অন্য লোকের সঙ্গে কথা বলবেন না। মনকে লক্ষ্মীতে স্থির রাখবেন। পূজার সময় অন্য কথা বললে বা অন্যমনস্ক হলে মন্ত্রপাঠাদি করে লক্ষ্মীপূজা করাই শ্রেয়। কিন্তু একমনে আন্তরিকভাবে লক্ষ্মীপূজা করলে বিনা মন্ত্রেই পূজা সিদ্ধ হয়। অবশ্য দীক্ষিত হলে গুরুমন্ত্রেও পূজা চলে। বিশেষভাবে মনে রাখবেন, মন্ত্রপাঠ ও পূজাক্রিয়াদিতেঅভিজ্ঞ ব্যক্তিরা বিনা মন্ত্রে পূজা করবেন না। বিনা মন্ত্রে পূজা শুধু সেই সবে অনভিজ্ঞদের জন্য।
লক্ষ্মীপূজা বৃহস্পতিবার মাত্রেই করা যায়। তার জন্য তিথি নক্ষত্রের বিচার করতে হয় না। তাই যাঁরা প্রবাসী তাদের ভারতীয় বা বাংলাদেশী সময় মিলিয়ে পূজা না করলেও চলবে, যেদেশে যেমন বৃহস্পতিবার পড়বে, সেই দেশে তেমনই করবে।
তাছাড়া শাস্ত্রে আছে, প্রবাসে নিয়মং নাস্তি। তাই প্রবাসী হলে রবিবার বা সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও লক্ষ্মীপূজা করতে পারেন। সেক্ষেত্রে পূজার আগে মায়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে বলে নেবেন, মা বৃহস্পতিবার পূজা করতে পারলাম না, আজ পূজা নাও। ভারত বা বাংলাদেশবাসী হলে বৃহস্পতিবারের পূজা বৃহস্পতিবারেই করবেন।

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বিশ্বরূপ দর্শন




                            স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বললেন যে, এই জড় জগত তার সৃষ্টি এবং তিনি প্রকাশ রূপে প্রবিষ্ট হয়েছেন বলেই এই জগত সৃষ্টি সম্ভব হয়েছে। এইকথা শুনে অর্জুনের মনে সংশয় দেখা দেয়। তিনি জগত থকে সর্ম্পূন আলাদা হওয়া সত্ত্বে ও শ্রীকৃষ্ণ কিভাবে জগতের অভ্যন্তরে সমস্থ কর্ম পরিচালনা করছেন তা দেখতে চাইলেন। অর্জুনের হৃদয়ের সুপ্তবাসনা জানতে পেরে শ্রীকৃষ্ণ তার বিশ্বরূপ দর্শন করাবেন বলে ঠিক করলেন। কিন্তু তিনি জানতেন অর্জুন তার দ্বিভুজ শ্যামসুন্দর রূপ দেখেই পুর্নমাত্রায় তৃপ্ত। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বিশ্বরূপ দর্শন করা বা তাকে শোনা এই জড় ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে সম্ভব নয়। তার বিশ্বরূপ দর্শন করতে গেলে দিব্য দৃষ্টির প্রয়োজন হয়। আর এই দিব্য দৃষ্টি লাভকরা সম্ভব প্রেম ভক্তি সহকারে ভগবানের সেবায় নিজেকে নিয়জিত করে। এক জায়গায় বসে ব্রহ্মান্ড দর্শন করা এবং শ্রীকৃষ্ণের বিশ্বরূপের দিব্য তেজ সহ্য করা সাধারন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়, তাই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে একটি বিশেষ শক্তি ও চক্ষু প্রদান করলেন, যাতে অর্জুন শ্রীকৃষ্ণের বিশ্বরূপের তেজ সহ্য করতে পারেন।অর্জুন যখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বিশ্বরূপ দর্শন করেছিলেন তখন তিনি শ্রীকৃষ্ণের পায়ের কাছে হাত জোর করে বসেছিলেন। অর্জুন দেখতে পেলেন শ্রীকৃষ্ণের শরীরে হাজার হাজার আলোক রশ্মি, অসংখ্য গ্রহ-নক্ষত্র সমন্বিত অনন্ত ব্রহ্মান্ড, সীমাহীন হস্ত, পদ, মুখ, কোনটি হিংস্র, কোনটি শান্ত, কোনটির থেকে বৈরাগ্য প্রকাশ
পাচ্ছে, আবার কোনটি মুক্তির পথ দেখাছে।

জয় শ্রীকৃষ্ণ

Wednesday, February 21, 2018

হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী পুনর্জন্ম সম্পর্কে ১০টি তথ্য

সনাতন ধর্ম - Sanatan Dharma : প্রাচীনকালের অনেক সভ্যতাতেই জন্মান্তর স্বীকৃত ছিল। সাম্প্রতিক কালে হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন এবং শিখ ধর্ম ছাড়া বিশেষ কেউ পুনর্জন্মকে স্বীকার করে না।

হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, আত্মা অবিনশ্বর। কারণ তা পরমাত্মার অংশ। মৃত্যুর পরে তা পরম সত্তায় বিলীন হয়ে যায়। কিন্তু প্রতিটি জন্মেই তা হয় না। কার্যত কর্মফল মানুষকে এক জন্ম থেকে অন্য জন্মের দিকে নিয়ে যায়।
এই তত্ত্বকে অনেকেই ভুল ব্যাখ্যা করেন। এক জন্ম থেকে অন্য জন্মে আত্মার গমন এক জটিল বিষয়। তাকে বৌদ্ধ ধর্ম যেভাবে ব্যাখ্যা করে, তা এক বিরাট যুক্তি পরম্পরা। জন্মান্তর সম্পর্কে কিছু তথ্য এখানে সন্নবিষ্ট রইল, যা হয়তো অনেক ভ্রান্তিরই নিরসন ঘটাতে পারে।
১. সাধারণত, মানুষ বেশিরভাগ সময়েই মানব জন্মের দিকেই ধাবিত হয়। তবে তার অন্য জীব হিসেবে জন্মও ঘটে।
২. কোনও পুরুষ পর পর তিনবার পুরুষ হিসেবে এবং কোনও নারী পর পর তিনবার নারী হিসেবে জন্ম নেন।
৩. কর্মফলবাদ অনুসারে সুকর্মগুলি দুষ্কর্মকে অতিক্রম করে না। দুষ্কর্মের জন্য দুর্ভোগ প্রত্যেককেই পোহাতে হয়। সুকর্ম থেকে জাত সুখও ভোগ করতে হয়।
৪. কারও যদি কোনও ইচ্ছা অপূর্ণ থেকে যায়, মৃত্যুর পরে সে প্রেতযোনি প্রাপ্ত হয়। এবং পরবর্তী জন্মের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘দেবযান’ এই ‘অপেক্ষা’রই কাহিনি।
৫. ‘শ্রীমদ্ভাগবত গীতা’-র ‘বাসাংশী জীর্ণানী’ পড়ে কারও যদি মনে হয়, মৃত্যুর অব্যবহিত পরেই আত্মা অন্য শরীরে প্রবেশ করে, তবে তিনি ভুল করবেন। হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, আত্মাকে দুই জন্মের মধ্যবর্তী পর্বে সাতটি স্তর অতিক্রম করতে হয়। তার পরে কর্মফল অনুযায়ী তার পুনর্জন্ম হয়।
৬. জন্ম থেকে জন্মান্তরে পরিভ্রমণ করতে করতে আত্মা অভিজ্ঞতা লাভ করতে থাকে। প্রাথমিক জাতকগুলিতে সে পার্থিব সুখগুলিকে গুরুত্ব দেয়। পরবর্তী জন্মগুলিতে তার মধ্যে আধ্যাত্মচেতনার উন্মেষ ঘটে।
৭. আমাদের সৎ ও অসৎ কর্মগুলি আমাদের শরীরেই নিহিত থাকে। মৃত্যুর পরে তা আত্মার সঙ্গে সঙ্গে সেই সব কর্মের স্মৃতি যুক্ত হয়। এই স্মৃতিগুলির সঞ্চয়ই আত্মাকে জ্ঞানী করে তোলে এবং মুক্তির দিকে নিয়ে যায়।
৮. অনেকেই মনে করেন সৃষ্টির আদিলগ্ন থেকেই মহাজগতের যাবতীয় স্মৃতি আমাদের দেহে সঞ্চিত রয়েছে। একে উপলব্ধি করতে পারাটাই ‘আত্মোপলব্ধি’। এই উপলব্ধিই নির্বাণ বা মোক্ষের দিকে নিয়ে যায়।
৯. কেবলমাত্র মানুষেরই মোক্ষলাভ সম্ভব। মানবজন্মে পৌঁছতে গেলে আত্মাকে ৮৪ লক্ষ যোনি পরিভ্রমণ করতে হয়। মানবজন্মই শ্রেষ্ঠ। এখান থেকেই আত্মার পূর্ণ মুক্তি সম্ভব।
১০. ন্যায়শাস্ত্রে জন্মান্তর সিদ্ধ। প্রমাণ হিয়েবে ন্যায় জানায়, জন্মের অব্যবহিত পরেই মানুষ স্তন্যপান করতে চায়। তার জানার কথাও নয় সেটি কী বস্তু। পূর্বজন্মের স্মৃতিই তাকে সে দিকে চালিত করে।

Featured post

মন্ত্র- কি ?

"মননাৎ ত্রায়তে যস্মাৎ তস্মাৎ মন্ত্র উদাহৃতঃ।" যাহার মননের দ্বারা, চিন্তার দ্বারা, ধ্যানের দ্বারা সংসার-সাগর হইতে উর্ত্তীর্ণ হওয়া য...

Popular