Saturday, September 8, 2018

সনাতন ধর্ম

জানি না কতটুকু তুলে ধরতে পেরেছিঃ
সনাতন ধর্ম হচ্ছে মহাসাগর বিশেষ। মনে করা যাক পুকুরের ছোট্ট একটি মাছকে মহাসাগরে ফেলে দেয়া হল। মাছটি সারা জীবন পুকুরের ছোট্ট পরিধিতে জীবন অতিবাহিত করেছে। তার কাছে তার ভূবন ততটুকুই (পুকুর পর্যন্তই সীমাবদ্ধ)। মহাসাগর সম্পর্কে কোন ধারণা লাভ যেমন ছোট্ট মাছের পক্ষে সম্ভব নয়, ঠিক তেমনি দু-একটি গ্রন্থ পড়ে বা কারো মুখ থেতে শুনে সনাতন ধর্ম সম্পর্কে ধারণা লাভ সম্ভব নয়। মহাসাগরের সুবিশাল পরিধি সম্পর্কে ধারণা পেতে যেমন নিয়ম মাফিক পদ্ধতিতে অগ্রসর হতে হয়! ঠিক তেমনি সনাতন ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে হলে আমাদের নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই অগ্রসর হতে হবে।
অনেকেই মনে করে সনাতন ধর্ম হচ্ছে হিন্দু ধর্ম! মূর্তি বা প্রতিমা পূজায় বিশ্বাসী! আবার অনেকেই সনাতন ধর্মকে ‘হিন্দু ধর্ম’ বলে আখ্যায়িত করে! যা নিত্যান্তই ভুল একটি ধারণা। সনাতন ধর্মের ভিত্তি বৈদিক শাস্ত্রের কোথায়ও ‘হিন্দু’ শব্দটির উল্লেখ নেই। নেই এই জন্য যে, তা আধুনিক কালে (ঊনবিংশ শতাব্দীতে) সৃষ্টি হয়েছে! বা কালক্রমে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে সনাতন ধর্মকে ‘হিন্দু ধর্মে’ পরিণত করা হয়েছে! হিন্দু একটি নির্দিষ্ট জাতি! হিন্দু ধর্ম বলতে বোঝায় হিন্দু জাতির ধর্ম! বৈদিক শাস্ত্রের কোথায়ও কোন জাতি, গোষ্ঠী, বর্ণ বা সমাজের ধর্ম হিসেবে সনাতন ধর্মকে অভিহিত করা হয়নি। অভিহিত করা হয়েছে মানব জাতির বা জৈব ধর্ম (জীবের ধর্ম) হিসেবে।
সনাতন ধর্মের প্রকৃত রূপ উন্মোচনের জন্য আমাদের যে ধর্ম গ্রন্থগুলি পাঠ আবশ্যক তা হলো-
১। বেদ-৪টি (ঋকবেদ, সামবেদ, যর্জুবেদ, অথর্ববেদ)
২। উপনিষদ-১০৮টি
৩। গীতা-১টি (৭০০শ্লোক)
৪। ভাগবত-১টি (১৮,০০০শ্লোক)
৫। মহাভারত-১টি (৬০,০০০শ্লোক)
৬। পুরাণ-১৮টি
৭। রামায়ণ-১টি
৮। চৈতন্য চরিতামৃত-১টি
এই গ্রন্থগুলোর পাঠ করলে জানা যাবে সনাতন ধর্মের কলেবর কতো বিশাল আর জ্ঞানগভীর। তবে রামায়ন আর মহাভারতে বৈদিক যুগের ইতিহাস লিপিবদ্ধ। ধর্মের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পেতে আমাদের আশ্রয় নিতে হবে ভাগবতের। তবে উল্লেখিত প্রতিটি গ্রন্থই মহা মূল্যবান আর প্রয়োজনীয়।
মানব জাতির স্বভাব হচ্ছে সহজ এবং সরল বিষয়গুলির প্রতি আসক্ত হওয়া। কঠিন বিষয়বস্তু এড়িয়ে চলা। যা আমাদের সমাজে আমরা পরিলক্ষিত করি। ধর্মের বেলায় ও একই ব্যাপারটি ঘটেছে। এতো বিশাল বৈদিক শাস্ত্রের ধারে কাছে না গিয়ে লোকজন সহজ এবং সরল দেব-দেবীর পূজায় নিজেদের ব্যস্ত রাখে। আর অন্যদিকে আমাদের সমাজের তথাকথিত জন্মগত ব্রাহ্মণ (পুরোহিত বা হোতা) নামধারী ব্যবসায়ীরা তাদের উদর পরিপূর্ণ করার জন্য সমাজে দেব-দেবী পূজার আজ্ঞা দেন। আজ্ঞা বলার কারণ অনেক। সমাজে সহজ সরল মানুষজন তাদের (পুরোহিতদের) অত্যাধিক শ্রদ্ধা ভক্তি করেন। পুরোহিতরা যে সিদ্ধান্ত দেন তা-ই শিরোধার্য হিসেবে ধরে নেন। আমি অনেক নামদারী ব্রাহ্মণের কাছে বৈদিক শাস্ত্র গুলোর নাম শুনতে চাইলে তারা প্রকৃতপক্ষে তা বলতে ব্যর্থ হন। যারা একটি ধর্মের শাস্ত্রীয় গ্রন্থের নাম বলতে অক্ষম, তাদের ব্রাহ্মণ বলার যুক্তি কোথায় আমি বুঝি না! তবে এখনও পুরোহিতদের মধ্যে অনেক জ্ঞানী এবং শাস্ত্রজ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তি রয়েছেন। তবে তাঁরা কেন চুপচাপ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এড়িয়ে যান তা আমার কাছে রীতিমতো বিস্ময়!
দেব-দেবী পূজাকে ভাগবতের আলোকে অপধর্ম হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। অপধর্ম অর্থ্যাৎ ধর্মের সঠিক রূপ নয়। অপধর্মের অনুসারীরা স্বর্গসুখ আর জড় পৃথিবীতে সুখে থাকার আশায় উপরোক্ত পূজা-পাঠ করেন। যা সনাতন ধর্ম কোনভাবেই প্রকৃত রূপ হিসেবে সমর্থন করে না। প্রকৃত ধর্ম হচ্ছে স্বর্গ-নরক-পৃথিবী সবকিছুর ভালবাসা কাটিয়ে আত্মাকে চিন্ময় জগতে নিয়ে পরম ব্রহ্মের সেবায় নিযুক্ত করা। এখানে শত-সহস্র দেবতা-উপদেবতাদের পূজা-পাঠ করার কোন সুযোগ নেই।
অনেকেই হয়ত ভাবেন আধুনিকযুগে এতো সময় কোথায় ঐ সব গ্রন্থগুলোর পাঠ করার। আবার আর্থিক দিকেরও একটি বিষয় এখানে রয়েছে। দেব-দেবী পূজায় কি অর্থ ও সময় খরচ হয় না! বরং মাত্রাতিরিক্ত খরচ হয় বিভিন্ন পূজানুষ্ঠানে! যার এক পঞ্চমাংশ সময় ও অর্থ খরচ করে সনাতন ধর্মের প্রকৃত রূপের অনুসন্ধান সম্ভব।

No comments:

Post a Comment

Featured post

মন্ত্র- কি ?

"মননাৎ ত্রায়তে যস্মাৎ তস্মাৎ মন্ত্র উদাহৃতঃ।" যাহার মননের দ্বারা, চিন্তার দ্বারা, ধ্যানের দ্বারা সংসার-সাগর হইতে উর্ত্তীর্ণ হওয়া য...

Popular